ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফায় রাজধানীতে গণমিছিল করেছে বিএনপি। গণমিছিল থেকে সরকারকে গণবিদায়ের ঘোষণা দেন নেতারা। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আলাদাভাবে গণমিছিল করে দলটি। মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। গণমিছিলের আগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন নেতাকর্মীরা। গণমিছিল কেন্দ্র করে এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
উত্তরের গণমিছিলটি বাড্ডা সুবাস্ত টাওয়ার থেকে শুরু হয়। শেষ হয় আবুল হোটেলে গিয়ে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আর কোনো দাবি আছে?’ সবাই ‘না’ বলে জবাব দিলে তিনি স্লোগান ধরেন, ‘এক দফা এক দাবি’; নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলেন, ‘শেখ হাসিনা কবে যাবি।’ এবার ফখরুল বলেন, ‘তাঁকে গণবিদায় করতে হবে। ওই গণভবনে পৌঁছাতে হবে, বঙ্গভবনে পৌঁছাতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। এবারের লড়াই জীবনপণ লড়াই। কোনোভাবেই আমাদেরকে আটকানো যাবে না।
তিনি বলেন, কেটে পড়ুন, পদত্যাগ করুন। না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে। এবারের লড়াই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লড়াই। জীবন দিয়ে হলেও রাজপথের আন্দোলনে সরকার পতন ঘটানো হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা নতুন যুদ্ধে নতুন লড়াই শুরু করেছি। মিছিলের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই তোমাদের দিন শেষ। আগামী দুদিনের মধ্যে সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি আসছে বলেও জানান তিনি।
দক্ষিণের গণমিছিলটি কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ রেলগেটে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও তানভীর আহমেদ রবিন, লিটন মাহমুদের যৌথ পরিচালনায় গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এডভোকেট ফজলুর রহমান, মনিরুল হক চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
সরকারকে সতর্ক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। বর্তমান অবৈধ সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। তারা সরাসরি গুলি করছে। এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
ড. মঈন খান বলেন, বর্তমান সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে বর্তমান ভোট চোর অবৈধ নিশিরাতের সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সারাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আমাদের দফা এক, দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ।