রাজশাহী:- একসময় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে নগদ টাকায় সেচের পানি নিতেন কৃষকেরা। তখন অপারেটররা কম সময় পানি দিয়ে বেশি টাকা আদায় করতেন। এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে বিএমডিএ চালু করেছে কৃষকের প্রিপেইড কার্ড। এতে অপারেটরদের দৌরাত্ম থেকে চাষিরা কিছুটা রেহাই পেয়েছেন।
তবে এখন মাঝে মাঝে অন্য বিপদে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। কখনও কখনও হওয়া হয়ে যায় কৃষকের কার্ডের টাকা। আবার কখনও মিটারে কার্ড ঢুকানোর পর কেটে নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। বিএমডিএ’র ভূতুড়ে মিটারে এ ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। বিএমডিএ ত্রুটির কথা স্বীকার করে বলছে, এটি সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। সফটওয়্যারের উন্নয়ন করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পালপুর গ্রামের চাষি আবদুর রহিম ওরফে হিম জানান, একবার কার্ডে ৩০০ টাকা রিচার্জের পর তিনি পানি পেয়েছেন মাত্র দুই মিনিট। গভীর নলকূপের মিটারে প্রিপেইড কার্ড ঢুকানোর পর মাত্র দুই মিনিটই সেচ পাওয়া গেছে। টাকা রিচার্জ করেছিলেন মালিগাছা গ্রামের জয়নাল আবেদিনের কাছে। তিনি টাকা দেননি ভেবে রহিম তার কাছেই গিয়েছিলেন। কিন্তু জয়নাল দেখিয়ে দেন তিনি টাকা দিয়েছিলেন। তাহলে দুই মিনিটে ৩০০ টাকা কীভাবে শেষ হলো সে প্রশ্নের উত্তর আজও পাননি প্রান্তিক কৃষক আবদুর রহিম।
পালপুর-১ গভীর নলকূপ এলাকার কৃষক ওয়াকিম হোসেন জানান, প্রতিঘণ্টা পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের ৯০ থেকে ১০০ টাকা কাটার কথা। কিন্তু একবার একঘণ্টায় তার ১৭০ টাকা কাটা হয়। একই মাঠের কৃষক রহিদুল ইসলাম জানান, মিটারে কার্ড ঢুকানোর সঙ্গে সঙ্গে তার ১২৭ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। একই এলাকার কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, দু’সপ্তাহ আগে তিনি আমবাগানে পানি দিতে ৫০০ টাকা রিচার্জ করে আনেন। এরপর এক ঘণ্টা তিন মিনিটেই তার সব টাকা কেটে নেওয়া হয়।
সাইদুল ইসলাম ৫০০ টাকা রিচার্জ করেছিলেন মুলকিডাইং গ্রামের বিএমডিএ’র প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ এজেন্ট জিয়াউর রহমানের কাছে। সাইদুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু শোনেননি বলে জানিয়েছেন। তবে কার্ডের টাকা নিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বাটুল নামে আমার এক কৃষক ১ হাজার ৩০০ টাকা রিচার্জ করেন। ডিপে গিয়ে সে মিটারে টাকাও দেখে। কিন্তু ১০ মিনিট পরেই ডিপ বন্ধ হয়ে যায়। পানি না যাওয়ায় জমি থেকে উঠে এসে সে দেখে ব্যালেন্স জিরো। শিক্ষিত ছেলে বলে সে টাকাটা দেখতে দেখেছিল। অন্য পড়াশোনা না জানা কৃষক হলে মনে করে আমিই টাকা দিইনি। তখন ঝামেলা করে।’ জিয়াউর জানান, বাটুলের সমস্যার কথা বিএমডিএকে জানানো হয়েছিল। অফিসে কার্ডটাও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি। টাকা নিয়ে এ রকম সমস্যা মাঝে মাঝেই হয়।
উপজেলার কাঁকনহাট আমতলীপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের ১ হাজার ২০০ টাকা তিন মিনিটেই কেটে নেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে এই কৃষক কার্ডে আর অতিরিক্ত টাকা ঢোকান না। কৃষকরা জানান, কার্ডের টাকা হওয়া হয়ে যাওয়ার পর বিএমডিএতে অভিযোগ করেও তেমন লাভ হয় না। বেশিরভাগ কৃষকই টাকা ফেরত পান না। এ ধরনের সমস্যার কারণে অনেক কৃষক আবার নিজের কার্ডেই রিচার্জ করতে চান না। তারা গভীর নলকূপে গিয়ে অপারেটরের কার্ডেই পানি নেন। তখন কম পানি নিয়ে কিছুটা বেশি টাকা দিতে হয় অপারেটরকে। বরেন্দ্রের বেশিরভাগ অপারেটর এই সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকেন।
সমস্যার কথা স্বীকার করেন বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, সফটওয়্যারের সমস্যার কারণে কখনও কখনও অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া হয়। কখনও দেখা যায় একজন কৃষক পানি নিলেন কিন্তু তার টাকা টাকা হলো না। কিন্তু পরে যে কৃষক পানি নিলেন তার কার্ড থেকে দুজনেরই পানির টাকা কেটে নেওয়া হয়। এ ধরনের সমস্যা হলে টাকা ফেরত দেওয়া যায় না। এ জন্য সফটওয়্যারের উন্নয়ন করার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, টাকা থাকা অবস্থায় কোন কৃষকের প্রিপেইড কার্ড নষ্ট হয়ে গেলে ওই কার্ডের টাকা নতুন কার্ডে দেওয়া যায়। তারা এ টাকা দেন।