নিজস্ব প্রতিনিধি।। আজ ১৭-০৭-২০২২ইং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব জনাব মোঃ সায়েদুল ইসলাম বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা (বিএআরজে) প্রকল্পের গবেষণা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
উক্ত পরিদর্শনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) জনাব কমলারঞ্জন দাশ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিজেআরআই এর মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ আবদুল আউয়াল মাননীয় সচিব ও অন্যান্য অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।
পরিদর্শনের শুরুতে বিজেআরআই এর মহাপরিচালক এবং বিএআরজে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ আবদুল আউয়াল মাননীয় সচিব ও উপস্থিত অতিথিবৃন্দদের স্বাগত জানান। বিএআরজে প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জিনোমিক্স) প্রকল্পের অর্জনসমূহ উপস্থাপন করেন। যথা- তোষা পাট ও দেশী পাটের জীবন রহস্য উম্মোচন, পাটসহ সারা বিশ্বে ৫০০ এর অধিক উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকারক ছত্রাক ম্যাক্রোফমিনা ফেসিওলিনা এর জীবন রহস্য উম্মোচন করা হয় যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষনার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে অবহিত করেন।
জৈবিক ও প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল উন্নত পাট জাতের ৪টি লাইন উদ্ভাবন (২টি তোষা, ২টি দেশী); ‘বিজেআরআই তোষাপাট-৮’ (রবি-১) নামে পাটের একটি জাত কৃষকের মাঠে চাষাবাদের জন্য ২০১৯ সালে অবমুক্ত করা হয় যা প্রচলিত জাতের চেয়ে শতকরা ১৫-২০ ভাগ ফলন বেশী ও আশেঁর মান ভাল যা কৃষকের নিকট ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং আশা করা যায় এ জাতটি কৃষকের মাঝে ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাট বীজের অমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে; ধইঞ্চার জিনোম এবং ধইঞ্চার ৪টি প্রজাতির ট্রান্সক্রিপটম (RNA-Seq) সিকুয়েন্স তথ্য উন্মোচন; চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী ও এনিম্যাল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয় এর সাথে যৌথভাবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী অতিমারী আকারে আর্বিভুত করোনা ভাইরাসের ৭টি স্ট্রেইন এর জিনোম তথ্য উন্মোচন; বিভিন্ন পরিবেশে পাট পচনের সাথে সংশ্লিষ্ট অনুজীবসমূহ সনাক্তকরণ এবং এদের মেটাজিনোমিক্স সম্পন্নকরণ; দক্ষ জনবলসহ বিশ্বের সর্বাধুনিক সিকুয়েন্সিং মেশিন (PacBio, Illumina, Proton S5, Capillary) ও অন্যান্য প্রায় সকল প্রয়োজনীয় মেশিন সংযোজন করে সিকুয়েন্সিং ডাটা জেনারেশন, বায়োটেকনোলজি, বায়োইনফরমেটিক্স এবং উচ্চ গতি ও ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ডাটা সেন্টারের সুবিধাসম্বলিত জিনোম গবেষণার একটি বিশ্বমানের আধুনিক প্লাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে যা একটি সার্বজনীন প্লাটফর্ম অর্থাৎ এখানে সকল জীবের (উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবের) জিনোম নিয়ে গবেষণা করা যাবে; জিনোম গবেষণায় অর্জিত ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণ করার নিমিত্ত ইতোমধ্যেই ইউরোপের ২২টি দেশসহ মোট ৩৫টি দেশে মোট ২৪৫টি আবেদন করা হয়, যার মধ্যে ১৬৪টি আবেদন চূড়ান্তভাবে গৃহিত হয়েছে এবং বাকীগুলো প্রসিকিউশনের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও তিনি প্রকল্পের চলমান গবেষণা কার্যক্রম যেমন- দ্রুতবর্ধনশীল পাট জাত; কম লিগনিনযুক্ত ট্রানজেনিক পাট জাত; রোগ প্রতিরোধী পাট জাত; জলাবদ্ধতা সহনশীল তোষা পাটের জাত ইত্যাদি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এক পর্যায়ে মাননীয় সচিব মহোদয় উপস্থিত সকল প্রতিষ্ঠান প্রধান ও অন্যান্যদের সাথে নিয়ে এই প্রকল্পের সৃষ্ট বিশ্বমানের জিনোম গবেষণার প্লাটফর্ম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে তিনি বিশ্বের সর্বাধুনিক সিকুয়েন্সিং মেশিনসমূহ, মলিকুলার বায়োলজি ল্যাব, উচ্চ গতি ও ধারন ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভারসমূহ, নিজস্ব সাব স্টেশনসহ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরিদর্শন শেষে মাননীয় সচিব প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের সাথে মত বিনিময় করেন।
তিনি বলেন, “এ চলমান গবেষণার ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি ফলাফলসমূহ সুবিধাভোগীর নিকট সহজলভ্য/টেকসই করার জন্য প্রকল্পটির কার্যক্রমকে একটি স্থায়ী রূপদান জরুরী।” এ প্রকল্পের অর্জনসমূহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের বিষয়ে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন। মাননীয় সচিব প্রকল্পের অর্জন ও সার্বিক গবেষণায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে প্রকল্পের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।