লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে আবারও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবারও বন্যার কবলে পড়েছেন তিস্তার দুই পাড়ের ১০ হাজার পরিবার।
আজ সোমবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সকাল ৯টায় পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার ১৪সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজর ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।
পাউবো সূত্র জানায়, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত রোববার রাত থেকে অস্বাভাবিক হারে তিস্তার পানি বৃদ্ধি শুরু হয়।
এদিকে পানি বৃদ্ধিতে শুধু তিস্তার বাম তীরে পাটগ্রামের আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকার ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ ১৫ গ্রামের ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানসহ অন্যান্য ফসলি জমি তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। ভেঙে পড়েছে চর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পুরো জেলায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
বন্যায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পানিবন্দী মানুষ। পানির নিচে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ রাস্তা ঘাট। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে।
ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত ও পুকুর। পশুপাখি নিয়ে বন্যার্তরা উচু স্থানে অবস্থান নিচ্ছেন। অনেকেই উচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে সকালে রান্নার কাজ করছেন। নলকুপ, টয়লেট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়ছেন বানভাসি মানুষ।
তিস্তা ব্যারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে তিস্তাপাড়ের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদী তীরবর্তী সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ডালিয়া পানি উন্নায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসাউদ্দৌলা বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বন্দি মানুষদের সবসময় খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ রাখছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউএনও এবং পিআইওর মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে।