আব্দুর রহিম/সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথা সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান করতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত হচ্ছে।ফলে বৈধভাবে বার্ষিক সাধারণ সভা না হওয়া পর্যন্ত বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দৈনন্দিন কার্যপরিচালনা ছাড়া অন্য কোন কার্যক্রম পরিচালনা না করা এবং সাধারণ সদস্যবৃন্দকে গঠনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ৪০ জন সাধারণ সদস্য।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদসহ প্রায় ৪০ জন সদস্য স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক আবেদন প্রেসক্লাবের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রদান করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য ৫ ফ্রেব্রুয়ারী বেলা ১১টায় সদস্যদের প্রেসক্লাবে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি জনাব মমতাজ আহমেদ বাপীর নেতৃত্বাধীন কার্যনির্বাহী কমিটি অগঠনতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারিতামূলকভাবে প্রেসক্লাব পরিচালনা করছেন। এরপরও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এটা আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান না করায় প্রেসক্লাব আবারো চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হয়েছে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের ৫.১ এর (ঞ) ধারায় বলা হয়েছে “সাধারণ পরিষদ বছরে কমপক্ষে তিনটি সভায় মিলিত হবে”।
কিন্তু বর্তমান কমিটির মেয়াদ ১১ মাস পূর্ণ হলেও কমিটি একটি সাধারণ সভাও অনুষ্ঠান না করায় গঠনতন্ত্র চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ৫.২ (গ) ধারায় কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ ১২ মাস নিদিষ্ঠ করে দেওয়া হয়েছে। ঐ ধারায় বলা হয়েছে “কার্যকরী পরিষদের মেয়াদ কাল হবে নির্বাচন অন্তে দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী ১২ (বার) মাস। তবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকারী নির্দেশসহ অন্যান্য অনিবার্য কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলে কার্যকরী পরিষদের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ৪৫ দিন বাড়ানো যেতে পারে। সাধারণ পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপস্থিত সদস্যের সমর্থনে কার্যকাল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কার্যকরী পরিষদ বাতিল হয়েছে বলে গণ্য হবে।” একই ভাবে ৫.১ এর (ড) ধারায় বলা হয়েছে “কার্যকরী পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ত্রিশ দিন পূর্বে বিধি মোতাবেক সাধারণ পরিষদের সভা আহবান করতে ব্যর্থ হলে কার্যকরী পরিষদ বিলুপ্ত হবে।” বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গত ২০২১ সালের ৮ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সেই হিসাবে ২০২২ সালের ৭ মার্চ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে।
তার ৩০ দিন পূর্বে অর্থাৎ ৫ ফ্রেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত না হলে এই কমিটি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিলুপ্ত হওয়ার বিষয় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আরো উল্লেখ্য, গত ইং ১২/০৯/২০২১ খ্রী. তারিখে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ১৩ জন সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক ক্লাবের বর্তমান সভাপতি সম্পাদক বরাবর একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লংঘনের সুনিদিষ্ঠ অভিযোগসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে ইং ১৮/০৯/২১ খ্রী. তারিখে আহবানকৃত সাধারণ সভার আলোচ্য সূচিতে অর্ন্তভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃক্ষের বিষয় ঐ আবেদন পাওয়ার পর কার্যনির্বাহী কমিটি সাধারণ সভা স্থগিত করে। পরবর্তীতে গত ইং ২২/০১/২২ খ্রী. তারিখে পুনরায় একটি সাধারণ সভার চিঠি পাঠানো হলেও একদিন পূর্বে সে সাধারণ সভাটিও স্থগিত করা হয়। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, গঠনতন্ত্র লংঘন করে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের পর হতে প্রেসক্লাবের কোন কার্যক্রমে কমপক্ষে ১৮ জন সাধারণ ও সহযোগী সদস্যকে বিরত রেখেছেন। তাদেরকে প্রেসক্লাবের কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানানো হয় না। কিন্তু কি কারনে এবং কেন এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা কেউ জানে না। অফিসিয়ালি তাদের নামও প্রকাশ করা হয় না।
প্রেসক্লাবের মত একটি মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের এই ধরনের রহফরপঃরাব আচরণ গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লংঘন। আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২২/০১/২২ খ্রী. তারিখের সাধারণ সভা করোনা পরিস্থিতিতে সরকারী নির্দেশনায় ১০০ জনের অধিক জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে স্থগীত করা হয়। কিন্তু ঐ সভায় নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ৯৯ জন সদস্যকে। এমনকি বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান না করে ভার্চুয়াল সাধারণ সভার যে প্রেসবিজ্ঞপ্তি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় গত ০২/০২/২২ খ্রী. তারিখে ই-মেইলে পাঠানো হয় ঐদিন পর্যন্ত ভর্তি ফি দিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে নতুন কোন সাধারণ সদস্য যুক্ত হয়নি। তাছাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় কখনোই সকল সদস্য উপস্থিত হন না। অনেকেই অনপুস্থিত থাকেন। ফলে উপস্থিতির সংখ্যা সরকারী নির্দেশনা অতিক্রম করার কোন সম্ভাবনাও ছিল না। তাছাড়া প্রেসক্লাবের সকল সদস্যই করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। ফলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সাধারণ সভা অনুষ্ঠানে কোন বাধা থাকার কথা নয়। তাছাড়া যেখানে দেশের বিভিন্নস্থানে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে, জাতীয় সংসদের অধিবেশন হচ্ছে, প্রায় সাড়ে পাচশত সদস্যের সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভা গত ৩১/০১/২২ খ্রী. তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে, ঢাকায় বানিজ্য মেলাসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ০২/০২/২২ খ্রী. তারিখে আমাদের জানামতে বৈধ তালিকা অনুযায়ী ১০৪ জনের মধ্যে ২ জন মৃত্যুবরণ করায় ১০২ জন সাধারণ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সভা অনুষ্ঠিত করার কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু কার্যনির্বাহী কমিটি আলোচ্য সূচি উল্লেখপূর্বক কোন নোটিশ না দিয়ে পত্রিকায় প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে “করোনাকালীন সময়ে এজিএম ও নির্বাচন যথা সময়ে করা সম্ভব না হওয়ায় আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং শনিবার বেলা ১২ টায় বিশেষ সাধারণ সভা (ভার্চুয়ালী) করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।” বলে যে বিবৃতি দিয়েছে তা গঠনতন্ত্রের চরম লংঘন। ফলে নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান না করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ০৫/০২/২২ খ্রী. তারিখের পর বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে বলে গঠনতান্ত্রিক বিধানেই নিশ্চিত করা হয়েছে।
তাছাড়া গত প্রায় একমাসে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির কমপক্ষে ৫টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় নিজেদের লোক সদস্য বানাতে যেভাবে দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকার কার্ড ও নিয়োগপত্র সংগ্রহের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা নজিরবিহীন। প্রেসক্লাবে নিজেদের সদস্য বাড়াতে রীতিমত সাংবাদিক বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আর সেই সুযোগে টাকা পয়সা লেনদেনের অনৈতিক তৎপরতার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি অনেকের কাছ থেকে। কিন্তু যারা প্রকৃত সাংবাদিক তাদের সদস্যপদ প্রদানে এ ধরনের অপতৎপরতার প্রয়োজন ছিল না। শুধু তাই নয়, প্রেসক্লাবের কোন বার্ষিক শিক্ষা সফর বা ট্যুর বা পিকনিকের কোন তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। এমনকি এ ধরনের কোন নোটিশও দেওয়া হয়নি। কিন্তু সভাপতি জনাব মমতাজ আহমেদ বাপী বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী অফিসে পিকনিকের নামে চাঁদা অনুদান চাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ঠ অফিসের অনেকেই খোজ খবর নিতে শুরু করেছেন। সামগ্রীক প্রেক্ষাপট প্রেসক্লাবের মর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুন্ন করছে।
এমতাবস্থায় যেহেতু ভার্চুয়াল সাধারণ সভার বিধান গঠনতন্ত্রে নেই এবং সেই সভায় রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর করার কোন সুযোগ নেই এবং সেই সভায় কোন প্রশ্নে ভোটাভুটির প্রয়োজন হলে সেটা অনুষ্ঠানেরও কোন সুযোগ নেই এবং অনেক সাধারণ সদস্য এনড্রোয়েড বা আই ফোন ব্যবহার করেন না এবং তথাকথিত বিশেষ ভার্চুয়াল সাধারণ সভার প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি “এজিএম ও নির্বাচন যথা সময়ে করা সম্ভব না হওয়ায়” উল্লেখ করে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন, এর মাধ্যমে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সকল সদস্যকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
সে কারনে আমরা এই ভার্চুয়াল সভার কোন গুরুত্ব আছে বলে মনে করি না। তাছাড়া কমপক্ষে ৩টি সাধারণ সভা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান করতে ব্যর্থ হওয়ায় ০৫/০২/২২ খ্রী. তারিখের পর বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনতান্ত্রিকভাবে বিলুপ্ত হয়েছে। একারনে বৈধভাবে বার্ষিক সাধারণ সভা না হওয়া পর্যন্ত বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দৈনন্দিন কার্যপরিচালনা ছাড়া অন্য কোন কার্যক্রম পরিচালনা না করার আহবান জানাচ্ছি এবং সাধারণ সদস্যবৃন্দকে গঠনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।