প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বেইলি রোডের বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি-নির্গমন পথ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে এই পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত ও বহু আহত হবার খবর পাওয়া পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, আমরা অগ্নি-নির্বাপন যন্ত্রের ব্যবস্থা করেছি, তবুও মানুষ এতটা সচেতন নয়। আপনি একটি বহুতল ভবনে আগুন দেখেছেন যার কোনো অগ্নি-নির্গমন পথ ব্যবস্থা নেই।
শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বীমা দিবস-২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে শেখ হাসিনা একথা বলেন।
রাজধানীর বেইলী রোডে বৃহস্পতিবার রাতে বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবন হলেও সেখানে কোন অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। ভবন বা স্থাপনা তৈরির সময় তিনি সবসময় স্থাপত্যবিদদের অনুরোধ করেন যেন খোলা বারান্দা বা ভেন্টিলেশন এবং অগ্নি-নির্বাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, কিন্তু স্থাপত্যবিদরা সেভাবে নকশা করেন না আবার মালিকরা এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে চায় না। ৪৬ জন মানুষ মারা গেছে। এরচেয়ে দুঃখ ও কষ্টের আর কী হতে পারে। অথচ আমরা ফায়ার এক্সটিংগুইসার লাগানোসহ অগ্নি-নির্বাপন পথের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ বার বার দিচ্ছি। সেটা কিন্তু তারা মানে না।
শেখ হাসিনা অভিমত ব্যক্ত করেন, দেখা যাবে এখানে কোন বীমাও করা ছিল না। কাজেই বিনিময়ে কিছু পাবেও না। এইসব ক্ষেত্রে সচেতনতা আসলে খুব বেশি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আরও ব্যাপকভাবে যাতে মানুষ সচেতন হয় সেই জন্য আপনারা (বীমা সংশ্লিষ্ট মহল) চেষ্টা করবেন, আমাদের তরফ থেকে আমরা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যাতে আরও বীমার দিকে এগিয়ে আসে সে বিষয়ে আপনারা আরো যত্নবান হবেন যাতে বীমা দাবিগুলো মানুষ সহজে পেতে পারে।
সরকার প্রধান বলেন, যারা অসদুপায় অবলম্বনকারী তাদের কথা আমি বলছি না। প্রকৃতপক্ষে যাদের প্রাপ্য তারা যেন সহজে পেতে পারে। এদিকে একটু দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ, দেখা যায় যারা দুই নম্বরি করে তারা আবার পার পেয়ে যায়। কারণ, তারা ম্যানেজ করে ফেলে। কাজেই কেউ যেন ম্যানেজ করতে না পারে আর সত্যিকার অর্থে যাদের প্রাপ্য তারা যেন সঠিকভাবে অল্পসময়ের মধ্যে বীমার টাকা পায় সেটাও ব্যাংকের মাধ্যমে আপনারা করে দিতে পারেন। এখনতো সুবিধা হয়ে গেছে। কাজেই সেদিকে আপনারা একটু দৃষ্টি দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাইকে সচেতন করতে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বীমা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ’কে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকের মাধ্যমে বীমা, অর্থাৎ ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রয়োজনানুযায়ী ব্যাংক থেকেই বীমা পলিসি যাতে নিতে পারেন সেইজন্য প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতীয় বীমা দিবস-২০২৪ উপলক্ষে বীমা দাবি পরিশোধের ভিত্তিতে চারটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।
তিনি দিবসটি উপলক্ষে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যেও পুরস্কার বিতরণ করেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বীমা শিল্পের ওপর এবং ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ এর ওপর নির্মিত পৃথক দু’টি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।