কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাককে যুক্তরাজ্যের ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। বাকিংহাম প্যালেসে রাজার কাছ থেকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণও পেয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে গত ২০০ বছরের ইতিহাসে ব্রিটেনের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিক।
এর আগে, আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হতে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার পর বাকিংহাম প্যালেসে যান ঋষি সুনাক। সেখানে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
ব্রিটিশ রাজা চার্লস কনজারভেটিভ এই নেতাকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে সরকার গঠনের প্রস্তাব পান ঋষি। বাকিংহাম প্যালেসের ১৮৪৪ কক্ষে রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে ঋষি সুনাকের বৈঠক হয়।
শুল্ক হ্রাসের পরিকল্পনা ঘিরে তৈরি হওয়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া লিজ ট্রাসের স্থলাভিষিক্ত হলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের মসনদে বসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঋষিকে নিয়োগ দিয়েছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। গত ৮ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার মাত্র দু’দিন আগে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ট্রাসকে নিযুক্ত করেছিলেন।
ব্রিটেনের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ট্রাস। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৩টা) ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বিদায়ী ভাষণ দেন লিজ ট্রাস। তার আগে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে বিদায়ী বৈঠক করেন তিনি।
ব্রিটেনের রাজনীতিতে গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় আছেন ঋষি সুনাক। ভারতীয় বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ইনফোসিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাতা সুনাককে ঘিরে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর।
কনজারভেটিভ এই নেতা পূর্ব আফ্রিকা থেকে ব্রিটেনে পাড়ি জমানো ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এক পরিবারের সন্তান। অভিবাসী পরিবারের সেই ঋষি ব্রিটেনের ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী হলেন।
সুনাকের বাবা-মা পূর্ব আফ্রিকা থেকে ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তার বাবা-মা উভয়ই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ১৯৮০ সালে ব্রিটেনের সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন সুনাক। তার বাবা যশবীর ও মা ঊষা। দু’নই ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা ছিলেন। পড়াশোনা আর ভালো কাজের আশায় তারা বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। যশবীর ব্রিটেনে একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনার এবং ঊষা ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন।
ঋষি সুনাক উইনচেস্টারের প্রাইভেট স্কুল উইনচেস্টার কলেজে পড়াশোনা করেছেন। শিক্ষাজীবনে গ্রীষ্মের ছুটিতে সাউদাম্পটনে ফিরে এক কারি হাউসে ওয়েটার হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। পরে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ পড়ার সময় স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সাথে পরিচয় হয় তার। পরবর্তীতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। তাদের দুই মেয়ে রয়েছে। এই দম্পতির এক মেয়ে একজন ভারতীয় বিলিয়নেয়ার এবং আইটি পরিষেবা জায়ান্ট কোম্পানি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রচারণার সময় প্রায়ই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নিজ মেয়েদের কথা উল্লেখ করতেন ঋষি।
বিবিসির টেলিভিশন বিতর্কের সময় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, তিনি ছোট দুই মেয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন, যারা আমার পরিবারের এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। সুনাকের সম্পদ এবং প্রাইভেট স্কুলের পটভূমি অন্যান্য টিভি বিতর্কেও আলোচনায় এসেছিল।
২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত গোল্ডম্যান স্যাচের বিশ্লেষক ছিলেন তিনি। তাকে ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী সংসদ সদস্যদের একজন মনে করা হলেও নিজের সম্পদের ব্যাপারে কখনই প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি সুনাক।
২০১৫ সাল থেকে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডের কনজারভেটিভ দলীয় এমপি তিনি। পূর্বসূরি বরিস জনসনের মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সরকারের একজন জুনিয়র মন্ত্রী হয়েছিলেন সুনাক।
ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের বহুল আলোচিত বিচ্ছেদ ব্রেক্সিটের সমর্থক ছিলেন তিনি। ইয়র্কশায়ার পোস্টকে বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যকে ‘মুক্ত, সুন্দর এবং আরও সমৃদ্ধ’ করে তুলবে।
ব্রেক্সিট ভোটের আরেকটি মূল কারণ অভিবাসন বিধিতে পরিবর্তন আনা বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। সুনাক বলেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি উপযুক্ত অভিবাসন করা হলে তা আমাদের দেশের জন্য উপকার বয়ে আনতে পারে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সুনাক যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণকারী এক প্রজন্মের সদস্য হলেও তার বাবা-মায়ের জন্ম ভারতে। ২০১৯ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এই পরিচয় তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।