অভিবাসন খাত নিয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এছাড়া জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচি প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী ইমরান আহমদ দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা ও সঠিক তথ্য প্রদানে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই পক্ষপাতিত্ব ও নিজস্ব চিন্তার প্রভাব এড়িয়ে সংবাদ উপস্থাপন করতে হবে। সত্য যত কঠেরাই হোক তুলে ধরতে হবে।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, ‘গত ১৩ বছরে ৭৮ লাখ লোক বিদেশে গেছে। ২১২ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। ইতিবাচক এসব বিষয়ও গণমাধ্যমে আসতে পারে।’
তিনি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানান। একই সাথে যারা নৈতিকভাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান করে— সেসব এজেন্সিকেও আগামীতে ফেয়ার মাইগ্রেশন অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অভিবাসনের গুরুত্ব অনেক। এ কারণেই আমরা অভিবাসন খাতে দক্ষ লোক তৈরি, নিরাপদ অভিবাসন, মানবপাচার বন্ধ ও বিদেশফেরতদের পুনরেকত্রীকরণে কাজ করি। প্রতি বছর মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের এই অনুষ্ঠানটি আমরা উৎসাহ নিয়ে আয়োজন করি, যাতে সারা বছরের একটা চিত্র উঠে আসে। সদিচ্ছা থাকলে পরিবর্তন সম্ভব উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভস কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ডেপুটি চিফ অব মিশন নুসরাত গাজ্জালি, আইএলও এর চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ল্যাটেশিয়া ওয়েবল, জুরি বোর্ডের সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ বি এম আবদুল হালিম ও বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ব্র্যাক জানায়, এ বছরের ১৪ জানুয়ারি গণমাধ্যম ও ব্র্যাকের ওয়েবসাইটে সপ্তম ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ বছর জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ.বি.এম আবদুল হালিম, আইএলও ’র শেখ মোহাম্মদ রেফাত আলী এবং নিউজ২৪ টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী।
এ বছর সংবাদপত্র জাতীয় বিভাগে দৈনিক সমকালের রাজিব আহাম্মদ প্রথম পুরস্কার, প্রথম আলোর মানসুরা হোসাইন দ্বিতীয় এবং দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের আরাফাত আরা ও আজকের প্রত্রিকার মো. শাহরিয়ার হাসান (বর্তমানে দৈনিক বাংলায় কর্মরত) যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
সংবাদপত্র আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে প্রথম হন দৈনিক চট্টগ্রাম খবরের ফারুক মুনীর, একুশে পত্রিকার শরীফুল ইসলাম দ্বিতীয় এবং সাপ্তাহিক চৌদ্দগ্রাম পত্রিকার মো. এমদাদ উল্যাহ তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
টেলিভিশন নিউজ বিভাগে ডিবিসি নিউজের সাবিনা ইয়াসমিন, (বর্তমানে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে কর্মরত) প্রথম স্থান অধিকার করেন। সময় টেলিভিশনের মারজিয়া মম দ্বিতীয় এবং নিউজ২৪ এর মাসুদা খাতুন তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। টেলিভিশন প্রোগ্রাম ক্যাটাগরিতে চ্যানেল ২৪ এর মোরশেদ হাসিব হাসান পুরস্কার লাভ করেন। রেডিও বিভাগে পুরস্কার পান বাংলাদেশ বেতারের মোস্তাফিজুর রহমান।
অনলাইন সংবাদপত্র বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন জাগোনিউজ ২৪ অনলাইনের জাহাঙ্গীর আলম। দ্বিতীয় হন দৈনিক প্রথম আলোর মো. মহিউদ্দিন এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন দৈনিক বাংলার জেসমিন আকতার ও প্রবাসী ফ্রিল্যান্সার রাকিব হাসান।
প্রত্যেক বিজয়ী পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, স্বীকৃতির সনদ এবং পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেক গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, অভিবাসন খাতে সাংবাদিকতাকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৫ সালে ব্র্যাক এ পুরস্কার প্রবর্তন করে। চলতি বছর সপ্তমবারের মতো এই পুরস্কার দেওয়া হলো। ঢাকায় ডেনমার্ক দূতাবাসের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের অনুপ্রেরণা প্রকল্প থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে আসছে।
Tweet
Share