ভরা মৌসুমেও বাজারে ক্রেতার স্বস্তি নেই। আমনের চাল বাজারে এলেও দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকায়। পাশাপাশি বাজারে নতুন পেঁয়াজ পুরোদমে বিক্রি হলেও দাম ক্রেতার নাগালে আসেনি।
সাত দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্য ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে ডাল, আটা-ময়দা, রসুন, এলাচ, আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। এতে ক্রেতার এসব পণ্য কিনতে ভোগান্তি বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকায়, যা সাত দিন আগে ৪৮-৫০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি সরু জাতের চালের মধ্যে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকা। মাঝারি আকারের চালের মধ্যে প্রতিকেজি বিআর-২৮ ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৭ টাকায়।
কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এখন চালের দাম কমার কথা। কিন্তু দাম না কমে বাড়ছে। মিলারদের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা সুযোগ বুঝে দাম বাড়ানোর কারণে পাইকারি বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে ক্রেতার বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হয়েছে।
নয়াবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা তুহিন বলেন, দেশীয় পেঁয়াজে বাজার এখন ভরপুর। সরবরাহও পর্যাপ্ত। কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি দেখিয়ে দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়ানো হচ্ছে। আমদানিকারক ও আড়তদাররা এই কারসাজি করছে। যে কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। এখনই যদি এই বিষয়ে তদারকি করা না হয়, অসাধু সেই সিন্ডিকেট দাম আরও বাড়াতে থাকবে।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৬০ টাকা ছিল। খোলা ময়দার কেজি ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু গত সপ্তাহে এই খোলা ময়দা সর্বনিম্ন ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ১৩৫ টাকা ছিল। এছাড়া কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ১৩৫ টাকা ছিল।
খুচরা বিক্রেতারা জানায়, প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা, যা সাত দিন আগে ২৪০ টাকা ছিল। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা, যা সাত দিন আগে ২৫০ টাকা ছিল। কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। আগে বিক্রি হয়েছে ৫৪০ টাকায়। প্রতি কেজি ছোট দানার এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৩০০০ টাকা ছিল। দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে এই পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি ধনে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ২৬০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৯০-১৯৫ টাকা ছিল।
কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, বাজারে যে সব পণ্য ক্রেতা বেশি কেনে বা যা খেয়ে ভোক্তা কোনোমতে টিকে আছে, অসাধু বিক্রেতারা সে সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা করছে। আলু, পেঁয়াজ সব পরিবারে দরকার। এই দুই পণ্যের দাম বিক্রেতারা এখনো কমায়নি। নতুন করে দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন চালের দাম কমার কথা, কিন্তু দাম বাড়িয়ে ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। আটা ময়দা কিনতেও ভোগান্ত বেড়েছে। সঙ্গে মসলা পণ্যের চড়া দাম কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। পরিস্থিতি এমন, সরকারের যে সব সংস্থা এ সব দেখবে, তদারকি করবে, তারা নিশ্চুপ। ফলে আমাদের মতো ক্রেতার অস্বস্তি বাড়ছে।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, বাজারে তদারকি চলমান আছে। কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, আবার কিছু পণ্যের দাম কমেছে। যে সব পণ্যের দাম বেড়েছে তা অভিযানের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।