মিথ্যা খবর ঠেকাতে নতুন আইন আসছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মিথ্যা তথ্য এবং মিথ্যা খবর দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি বন্ধ করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিছু আইন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই সংসদে আসবে। তবে সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ সরকারের উদ্দেশ্য নয়।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদারের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা জানান। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে সংসদে প্রশ্নের জবাব দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
জাপার এমপি রুহুল আমিন হাওলাদার তার প্রশ্নে বলেন, অনেক অনলাইন সংবাদমাধ্যম মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, অপপ্রচার করে। এগুলো বন্ধে আইন করা হবে কি না। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংবিধানে বলা মৌলিক অধিকারের মধ্যে বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। সেই নিরিখে এবং সেটাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে আইন প্রণয়ন করতে হয়। ইতোমধ্যে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছ।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমি সংসদ সদস্যকে জানাতে চাই, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং আরও কিছু আইন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই সংসদে আসবে। তবে সংবাদ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ নয়, মিথ্যা তথ্য এবং মিথ্যা খবর দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যাতে বন্ধ করা যায়, সে ব্যবস্থা সরকার নেবে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমি বলে রাখত চাই, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা কোনোভাবে সরকার খর্ব করবে না।
জাপার আরেক এমপি মুজিবুল হক চুন্নুর অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত ২০৮টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ১৬৮টি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন নিউজ পোর্টালকে নিবন্ধন সনদ দেয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী জানান, সারাদেশের অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো নিবন্ধনের জন্য সরকার রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু করেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে তথ্য অধিদপ্তর নিবন্ধনের কাজ পরিচালনা করে। তথ্য অধিদপ্তর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২০৮টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ১৬৮টি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন নিউজ পোর্টালকে নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়ে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের বিষয়টি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে আরও অনলাইন পোর্টালের নিবন্ধন দেওয়া হবে।
আনিসুল হক বলেন, অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অনলাইন পোর্টালগুলো নিবন্ধনের আওতায় এনে সরকারিভাবে নজরদারী বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ ছাড়া দেশের অনিবন্ধিত কোনো অনলাইন সংবাদপত্রে বা অনলাইনভিত্তিক পোর্টালে দেশবিরোধী সংবাদ প্রচার বা মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচারের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাহা বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
সাতক্ষীরা-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি এস এম আতাউল হকের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ২০১৫-১৬ হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সারাদেশে অসুস্থ্য, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত ও মৃত ১৩ হাজার ৭৪৬ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের মাঝে ৪১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা অনুদান বিতরণ করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র সদস্য সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর পক্ষে আইনমন্ত্রী জানান, দেশীয় চলচ্চিত্রের ভিডিও পাইরেসি বন্ধের জন্য বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের পক্ষ হতে নিয়মিত সিনেমা হল মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে ভিডিও পাইরেসির প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভিডিও পাইরেসি বন্ধ করা গেলেও ওটিটি প্লাটফর্মসহ অনলাইন মাধ্যমে বিদেশি চলচ্চিত্রের অবাধ প্রচারের ফলে দেশীয় চলচ্চিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। ওটিটি প্লাটফর্মসহ অন্যান্য অনলাইন মাধ্যমে প্রচারিতব্য সিনেমাসমূহ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফেকশন আইন-২০২৩ জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। শীঘ্রই আইনটি অধিক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা হবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিসিক শিল্পনগরীতে ১ হাজার ৩০৪টি শিল্পপ্লট খালি রয়েছে, যেখানে বেসরকারি উদ্যোক্তারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারবেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিসিকের দেশব্যাপী বাস্তবায়িত ৮২টি শিল্পনগরীর মোট ১২ হাজার ৩৫৩টি শিল্পপ্লটের মধ্যে ১১ হাজার ৪৯টি শিল্পপ্লটে বেসরকারি উদ্যোক্তা কর্তৃক ৬ হাজার ৬২ শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্পনগরীর কারখানাসমূহে জুন ২০২৩ পর্যন্ত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৫ হাজার ৩৯৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।