মো. আহসানুল ইসলাম আমিন:
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। তারা জানিয়েছেন, দিন দিন হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত শনিবার হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৩ জন। গত সোমবার নতুন করে আরো ৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৬ জন রোগী। এদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ আর ৩ জন হলো নারী। এছাড়াও হাসপাতালটিতে জ্বর , ঠান্ডা, সর্দিকাশি ও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দিয়ে প্রতিদিন নানা বয়সী রোগীরা ভর্তি হয়েছেন। গত- দুই দিনে মোট ৬ জন ডেঙ্গু রোগীকে সনাক্ত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদেরকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বেশ কয়েকদিন যাবৎ হাসপাতালটিতে মৌসুমে জ্বর, ঠান্ডা জনিত রোগ নিয়ে রোগীতা ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। সেখানে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো বেশি। বর্তমানেও হাসপাতালটিতে কমেছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সংখ্যা। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পর সর্বোচ্চ ৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সরেজমিনে, মঙ্গলবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা বেডে ডেঙ্গু কর্ণারে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এছাড়াও জ্বর , ঠান্ডা ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী হাসপাতালে বেড না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলায় হঠাৎ করেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়তির দিকে। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুইটি ওয়ার্ডে মোট ৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। পরিক্ষা-নিরিক্ষা শেষে তাদের শরীরে ডেঙ্গু সনাক্ত করা হয়। এছাড়াও আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে মানুষ। রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেড সংকটে অনেক রোগীকে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাসেবা নিতে দেখা গেছে। এদিকে, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তারা হলেন, তামিম (১৮), জুনায়েদ (২২), সজল (২৪) রাকিব (২০), মর্জিনা (৫৫), দিপা হালদার (৩৫) এবং রুমা বেগম (৪০) । তাদের সকলেরই হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীরব্যথা ও জ্বর হয়। অনেকের শরীরে খিচুনিও হয়। পরে স্বজনরা তাদেরকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে স্বজনরা তাদের রক্ত পরিক্ষা করান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর তাদের সকলের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট আসে। হাসপাতালটিকে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে রোগীরা সন্তুষ্ট প্রকাশ করলেও অনেক রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অধিকাংশ সময়ে রোগীদের প্রয়োজনীয় ঔষধ বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজন মো. মহিউদ্দিন জানান, আমার ছেলের প্রচন্ড জ্বর ও মাথাব্যাথা ছিলো । অনেক ঔষধ খাওয়ানোর পরও জ্বর কমেনি।এরপর হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। চিকিৎসকরা পরিক্ষা- নিরিক্ষা দিয়েছিলো। পরিক্ষার পর আমার ছেলের শরীরে ডঙ্গু সনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসাসেবা চলছে কিন্তু আমার ছেলের শাররীক তেমন কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছেনা।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী জানান, তিন দিন ধরে জ্বর ও প্রচন্ড মাথাব্যাথায় ভোগেছি। এরপর বেশি অসুস্থ্য হয়ে গেলে আমার ভাই এবং মা আমাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। চিকিৎসকরা ঔষধ ও স্যালাইন দিয়েছে। পরিক্ষা করানোর পর ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। আগের থেকে আমি এখন অনেকটাই সুস্থ্য আছি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলায় ডেঙ্গুর আক্রান্তের যে সমস্যা প্রথম থেকেই খুব একটা বেশি রোগী ছিলোনা। বর্তমানে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। বলাচলে এবছর এটাই সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দুইটা, তিনটা বা চারটার মতো রোগী ভর্তি থাকে। এখনও কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যায়নি। তিনি আরো বলেন, আমরা এবছর তেমন কোন রোগী ঢাকাতে রেফার করিনি। এবছর বৃষ্টি একটু দেরিতে আসা বা অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়াতে ডেঙ্গুর প্রভাবটা থেকে যাচ্ছে। আমরা আশাবাদি যেহেতু বৃষ্টি কমে গেছে বা আর বৃষ্টি না হলে এই ডেঙ্গু সমস্যা থাকবে না।