Imam Hossain
বর্তমান সময়ে কিশোর কিশোরীদের মনে নানান বিষয় নিয়ে প্রশ্ন জাগে এবং সেই প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে তারা নানাবিধ মানসিক চাপ অনুভব করে ফলে নিজেদের অজান্তে ক্ষতি করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের।
যখন কাশফিয়া নিজে একজন কিশোরী ছিলেন তিনিও একই সমস্যার শিকার হন । বাকিদের মতো তারও মনে জাগতো হাজারো অজানা প্রশ্ন , তারও নানাবিধ কারণে হতো মন খারাপ কিন্তু সমাধান?
কাশফিয়া কাওসার মীমের শৈশব – কৈশোর কেটেছে কুমিল্লা শহরে।
যেহেতু তিনি বেড়ে উঠেছিলেন হয়েছেন মফস্বলে , সেখানে ছিলো না কোনো মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্র । বাকি আরো হাজারো কিশোর- কিশোরীদের মতো তিনিও ভোগেন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় । যেমন এই সময়ে সবথেকে বড় মানসিক চাপ হচ্ছে অ্যাডমিশন টেস্ট এর মতো বিষয় যা তিনি নিজেও ফেইস করেছেন।
তবে যখন তিনি এই ধরনের নানাবিধ মানসিক চাপের চাপের সম্মুখীন হন তখন তিনি এর সমাধান খুঁজতে থাকেন । তিনি রিচার্স করা শুরু করেন এমনকি প্রচুর ইউটিউব ঘাটাঘাটি করতেন তবে এগুলো ছিল সাময়িক সমাধান । তিনি কিশোরী বয়স থেকেই চাইতেন স্থায়ী কোনো সমাধান।
সেই সমাধানের খোঁজে তিনি মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার পরেও সুইচ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি ইডেন মহিলা কলেজে মনোবিজ্ঞান বিভাগে।
মানুষের নানা কথার সম্মুখীন হন তিনি কিন্তু ঐযে নিজের আগ্রহ এবং সমাধানের খোঁজ যেনো তাকে ক্ষুধার্থ করে তুলেছিল , সে নিজের মতো ,তার থেকে ছোটো বয়সের কিশোর- কিশোরীদের কাছেও পৌঁছে দিতে চেয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
কোনো বাঁধার পরোয়া না করে তার পড়াশুনা শুরু করেন তিনি মনোবিজ্ঞান বিভাগে।
তবে ২০২০ সালে আগত করোনা যেনো তার স্পৃহাকে কমিয়ে দিচ্ছিলো। তাকে ফেরত যেতে হয় কুমিল্লা শহরে।
কিন্তু সে তার স্পৃহাকে ধরে রাখার উদ্যোগে এমন কিছু করতে চায় যা দ্বারা তার শহরের কিশোর- কিশোরীরা পজিটিভভাবে কিছু শিখতে পারবে ,জানতে পারবে যা তারা অনুভবও করবে।
এই চিন্তা থেকে একদিন নিজের ফেসবুক এর স্টোরি তে একটি লিখা পোস্ট করে যাতে লিখা ছিল – ” আমার ফেসবুক এ যারা আমার জুনিয়র আছো তাদেরকে নিয়ে আমি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজ করতে চাই”
সেই সময় যারা স্টোরিতে সাড়া দিয়েছিলেন তাদের নিয়ে তিনি একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলেন যার নাম ছিল – ” জুনিয়রছ মেন্টাল হেলথ ডেস্ক” – এটি এমন একটি ডেস্ক যেখানে জুনিয়ররা সমাধানের আসা রেখে তাদের মানসিক সমস্যা শেয়ার করতে পারবে ।
ধীরে ধীরে সময় যত যেতে থাকে তার এই উদ্যোগে সাড়া ফেলে কয়েকশ কিশোর – কিশোরীর মাঝে । তাদের সমস্যাগুলোর মাঝে কাশফিয়া মাঝে মাঝে দেখতে পেত অনেক গভীর পর্যায়ের সমস্যাও রয়েছে যার সমাধান দ্রুত দরকার আর নয়তো আত্মহত্যার মতো ভুল পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করে ফেলত। তিনি কয়েকশ কিশোর – কিশোরীদের দেখিয়েছেন বাঁচার আলো ।
২০২০সালের আগস্ট এর ২০ তারিখের পরে করোনা কমে আসতে দেখে তিনি তার কাজগুলোকে অফলাইন এ প্রসারিত করতে চান । তখন তিনি ধাপে ধাপে প্রথমে নিজের হতে লিখা , আঁকা ব্যানারের মাধ্যমে একটি রেস্টুরেন্টে সেশন রাখেন । সেই সেশনের থিম ছিলো – ” মন খারাপের দিনটিকে স্কিল ডেভলপমেন্ট এর দিন বানাতে হবে” সেদিন সেশনে ৩০ জন সদস্য ছিল যারা তার জন্য ৮০ টি চিরকুট নিয়ে আসে ,যেখানে লিখা ছিল ভিন্ন রকমের মানসিক সমস্যার কথা। যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে তারা কাশফিয়ার সান্নিধ্যে আসে ,সমাধানের আসায়।
সেই চিরকুটগুলির মাধ্যেমে তিনি বুঝতে পারে সে জেই কাজটির উদ্যোগ নিয়েছে সেটি সঠিক এবং
বর্তমান সময়ে তাদের কাশফিয়া নেওয়া উদ্যোগটির খুবই প্রয়োজন ছিল।
অতপর সে “মেন্টাল হেলথ কেয়ার” নামক অলাভজনক অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করেন , যেখানে বয়স সীমা ছিলো ১৩-১৯। এই ১৩ – ১৯ বছর বয়সী কিশোর – কিশোরীদের নিয়ে তার যাত্রা শুরু হয় ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর এর ২২ তারিখে তিনি তার দ্বিতীয় প্রোগ্রাম টি করেন যার থিম ছিল সুইসাইডাল প্রিভেনশনকে কেন্দ্র করে –
” Say Yes To Life”.
এই থিমের মুখ্য কারণ হিসেবে তিনি জানান ,তিনি চেয়েছিলেন যারা এই প্রোগ্রামে থাকবেন তারা “জীবনকে নতুন করে দেখবার সুযোগ দিক নিজেদের এবং জীবনের সব কষ্ট – হতাশা ভুলে আবারও জীবনকে হ্যাঁ বলুক, হ্যাঁ বলতে শিখুক।”
তিনি সেদিন শিখিয়েছিলেন কিভাবে পজিটিভলি জীবন পরিচালনা করতে হবে এবং কিভাবে জীবনকে হ্যা বলতে শিখতে হবে ।
উক্ত প্রোগ্রাম টি সাড়া ফেলে ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন অর্গানাইজেশন এবং বাংলাদেশের সোশাল বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে। তিনি সকলের কাছে প্রশংসিত হয়ে কাজের প্রতি মনোনিবেশ করার আরো উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন এবং ২০২১ সালে ২ টি ব্রাঞ্চ শুরু করেন , একটি ঢাকাতে এবং অন্যটি কুমিল্লাতে । তার কিছুদিন পরে তিনি চট্টগ্রামেও একটি ব্র্যাঞ্চ শুরু করেন ।এভাবে তিনি ৫ টি ব্রাঞ্চ সফলভাবে শুরু করেছেন ইতিমধ্যে।
তিনি চান বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় তার ব্র্যাঞ্চ থাকবে যার মাধ্যমে ৬৪ জেলার কিশোর – কিশোরীরা জানবেন মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে এবং তারা যেহেতু শিক্ষার্থী,তাদের কাছে এত টাকা নেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা দেওয়া সেহেতু তাদের সকল সমস্যার সমাধান তারা পাবে কাশফিয়ার করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান “মেন্টাল হেলথ কেয়ার” এর মাধ্যমে ।
এই মুহূর্তে কশফিয়ার টিম এ রয়েছে ৮ হাজারেরও বেশি কিশোর – কিশোরী যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যুক্ত আছে তার এই অলাভজনক সংস্থায়।
তিনি বর্তমানে কাজ করছেন” প্রজেক্ট লাইফ কেয়ার” নিয়ে ,যার মূল থিম হচ্ছে “Learn To Life Happy”.
কাশফিয়া এই সকল কাজের মুখ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান ,
“তিনি এই সংস্থার মাধ্যমে সকলকে একটি নন – জাজ মেন্টাল পারিবারিক বন্ধন এ আবদ্ধ করতে চান , যেখানে মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল এবং নরমাল মানুষদের মাঝে যেই ব্রিজ টা রয়েছে সেটাকে কানেক্ট করতে যাতে এই ব্রীজের মাধ্যমে সকলে সকল ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার সমাধান পেয়ে যায়।”
সম্প্রতি মেন্টাল হেলথ কেয়ার কর্তৃক আয়োজিত প্রজেক্ট ‘লাইফকেয়ার ‘হয়েছিল ‘নবাব ফয়েজুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ কুমিল্লাতে, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
করোনাকালীন মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করেন তিনি । এই কাজে অবদান রাখার জন্য ‘কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ’-এর অন্তর্ভুক্ত সংগঠন ‘Women Peace Cafe ‘ এর পক্ষ থেকে পুরস্কার পান
Women’s Health Care During Pandemic।