আরও একবার লিওনেল মেসির জাদু, সঙ্গে জুলিয়ান আলভারেজের জ্বলে ওঠা। কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার লড়াইটাও করা হলো না তাতে। দাপুটে জয়ে আর্জেন্টিনা পৌঁছে গেল ফাইনালে। অধরা বিশ্বকাপের পরশ পাওয়া থেকে এখন আর এক ধাপ দূরে রইলেন মেসি।
লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। দলের পক্ষে দুটি গোল করেন আলভারেজ। অন্য গোলটি মেসির। যে গোলে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড হয়ে গেল মেসির। আর আলভারেজের দ্বিতীয় গোলটি তো হয় মেসির জাদুকরী অ্যাসিস্ট থেকে।
প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। যদিও তাদের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। কিন্তু ম্যাচের ২০ মিনিট পার হতেই আর্জেন্টিনা দেখা দিল ভয়ঙ্কর রূপে। পেনাল্টি থেকে লিওনেল মেসি গোল করলেন। এরপর জুলিয়ান আলভারেজ জাদু। মন মাতানো গোলে লিড করলেন দ্বিগুন।
প্রথম ২০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়া ৬৬ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখে খেলে। গোল মুখে একটি শট নিলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। আর আর্জেন্টিনা এই সময়ে কোনো শটই নিতে পারেনি প্রতিপক্ষের পোষ্টে। দুই দলের খেলাটা তখন পর্যন্ত ছিল মিডফিল্ড কেন্দ্রিক। কিন্তু এরপর আর্জেন্টিনা বদলে যায়।
২৫তম মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজ ডিবক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে দূর পাল্টার শট নেন। তবে ক্রোয়াট গোলকিপার লিভাকোভিচকে সেটি তেমন পরীক্ষায় ফেরতে পারেনি। ৩১তম মিনিটে ভালো সুযোগ তৈরি করে ক্রোয়েশিয়া। ডিবক্সের বাঁপাশ থেকে ইভান পেরিসিচের ডান পায়ে শট পোষ্টের ওপর দিয়ে যায়।
পরের মুহূর্তেই পাল্টা আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। জুলিয়ান আলভারেজ বিপদজনকভাবে ঢুকে পরেন ক্রোয়েশিয়ার বক্সে। তাকে বক্সে ফাউল করেন ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার লিভাকোভিচ। ফলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। হলুদ কার্ডও পান লিভাকোভিচ। স্পট কিক থেকে মেসি গোল করতে ভুল করেননি।
এই গোলের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার জয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে গেলেন মেসি।
৩৪তম মিনিটে মেসির করা ওই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই দেখার মতো এক গোল করেন আলভারেজ। আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ২-০ তে।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে ক্রোয়েশিয়ার মারিও পাসালিক ভালো একটি সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি।
কোয়ার্টার ফাইনালে এই দুই দলই টাইব্রেকারে জয় তুলে নেয়। আর্জেন্টিনা হারায় নেদারল্যান্ডসকে। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া হারায় পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে।
ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুর একাদশে দুটি পরিবর্তন এনে এদিন মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। আকুনিয়া কার্ডের খাড়ায় খেলতে পারেননি। তার জায়গায় ফুলব্যাক হিসেবে একাদশে আসেন নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। আর ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেসের জায়গায় একাদশে জায়গা করে নেন মিডফিল্ডার লেয়ান্দ্রো পারেদেস। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া মাঠে নেমেছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের একাদশ অপরিবর্তিত রেখে।
বিরতির পর বল দখলে ফের আধিপত্য দেখাতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। তবে আক্রমণে আধিপত্য ছিল আর্জেন্টিনারই।
৪৯তম মিনিটে রদ্রিগো ডি পলের বাড়ানো বল ধরে ডিবক্সের বাইরে থেকে ডানপায়ে শট নেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস। পোষ্টে রাখলেও সেটি প্রতিহত হয়। ৫৮তম মিনিটে বক্সের ভেরত থেকে মেসির বাঁপায়ের শট রুখে দেন ক্রেয়েশিয়ার গোলকিপার লিভাকোভিচ।
৬২তম মিনিটে মদ্রিচের বাড়ানো বলে লভরেন ভালো সুযোগ তৈরি করলেও গোল করতে পারেননি।
৬৯তম মিনিটে মেসির জাদুকরী অ্যাসিস্টে গোল করেন আলভারেজ। ব্যবধান ৩-০ হয়ে যায় তাতে। ডানদিকে মেসি একক প্রচেষ্টায় ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষের বক্সে। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় কোনোভাবেই তাকে আটকাতে পারেননি। বক্সের ভেতরে মেসি আলতো টোকায় আলভারেজের উদ্দেশ্যে বল বড়ানা। গোল করতে ভুল করেননি আলভারাজে। চলতি আসরে যা তার চতুর্থ গোল।
আর লিওনেল মেসির এদিনের গোলের মাধ্যমে চলতি আসরে গোল হলো ৫টি। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় যা তাকে নিয়ে গেল শীর্ষে। সমান পাঁচ গোল নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে কিলিয়ান এমবাপ্পে। অ্যাসিস্ট সংখ্যায় এগিয়ে থাকায় মেসি তার ওপরে।
আর্জেন্টিনা এরপরেও ম্যাচের তাদের দাপট ধরে রাখে। ক্রোয়েশিয়া তাই আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। লুকা মিদ্রচকে এদিন ৮১তম মিনিটে তুলে নেন ক্রোয়েশিয়া কোচ। আর্জেন্টিনার হয়ে চলতি আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন দিবালা। দুই গোল করা আলভারেজের বদলি হিসেবে নেমেছিলেন তিনি।
ম্যাচে সব মিলিয়ে ৬১ শতাংশ বলের দখল ছিল ক্রোয়েশিয়ার। প্রতিপক্ষের পোস্টে ১২টি শটও নিয়েছে তারা। কিন্তু লক্ষে রাখতে পেরেছে দুটি। অন্যদিকে ৯টি শট নিয়ে ৭টিই লক্ষ্যে রেখেছিল আর্জেন্টিনা। ফলে তাদের দাপটটাই ফুঠে উঠে ম্যাচে।
বুধবার আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফ্রান্স খেলবে মরক্কোর বিপক্ষে। জয়ী দল আগামী রবিবার ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে।