ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিকদের যেকোনো মূল্যে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
বুধবার (১৩ মার্চ) সচিবালয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতরে ফেরি, স্টিমার, লঞ্চসহ জলযান সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্মপন্থা গ্রহণের বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় জাহাজটিতে ২৩ জন ক্রু ছিলেন।
অপহরণ হওয়া জাহাজ উদ্ধারের অগ্রগতি জানতে চাইলে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কথা হচ্ছে যে কোন মূল্যে আমাদের নাবিকদেরকে আমরা বাংলাদেশে ফেরত আনতে বদ্ধপরিকর।’
তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা… এটা ভারত মহাসাগরে, বলা হচ্ছে সোমালিয়া থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি, কাজেই সোমালিয়া বলে দেয়া যাবে না। জলদস্যু কারা এটাই এখনো আইডেন্টিফাইড না। ওই অঞ্চলটি সোমালিয়ান অঞ্চল সেটি বলা যেতে পারে। তবে সেটাকে তা (সোমালীয় জলদস্যু) বলা মুশকিল, সেটা আপনি হতে পারেন, আমিও হতে পারি।’
জিম্মিদের পরিবারগুলো উদ্বিগ জিম্মিদের পরিবার উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সামাজিক জীব, পরিবার নিয়ে বসবাস করি। যে পরিবারগুলোর সদস্যরা সেখানে আটকে আছে, সেই পরিবারগুলোর কিভাবে দিন যাচ্ছে সেটা আমরা ফিল করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। অন্যান্য জায়গাগুলোতে তিনি কথা বলেছেন। নাবিকদের নিরাপদে বাংলাদেশে ফেরত আনার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘যারা এখন জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা তো মানুষ না তারা জলদস্যু। মানুষের সঙ্গে কথা বললে আমি সময় নির্ধারণ করতে পারব, এতগুলো মিটিং করলে আমরা শেষ করতে পারবো। এটা জলদস্যুদের বিষয়, জলদস্যু আর মানুষ এক নয়। তাই সময়টা এখানে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা বদ্ধপরিকর, আমাদের নাগরিক নাবিকদেরকে আমরা সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং, মেরিটাইম যতগুলো উইং আছে তারা কাজ করতেছে। সমন্বিতভাবে আমরা এটি নিয়ে আসতে পারবো। আমরা বসে নেই। গতকালকে বিকাল থেকেই এটা থেকে এক মুহূর্ত বিচ্যুত নই, সবসময় সংযুক্ত আছি।’
‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমরা এই বিষয়ে অবহিত করেছি। জাহাজটাকে উদ্ধার করার জন্য আমরা সকলের সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা প্রথম যে বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি সেটা হচ্ছে, জাহাজে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন, সেই ২৩ জন নাবিকের জীবন নিরাপদ রাখা, জীবন রক্ষা করে তাদেরকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসাটা হচ্ছে আমাদের প্রথম কাজ।’
তিনি বলেন, ‘যেসব জলদস্যু জাহাজটাকে অকুপাইড করে রেখেছে নাবিকদেরকে আটকে রেখেছে, তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। নাবিকরা এখনও নিরাপদে আছেন ও সুস্থ আছেন।’
জাহাজ উদ্ধারে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা কিভাবে সহযোগিতা করবে সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক উইংগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
মুক্তিপণ না দিলে জিম্মিদের হত্যা করা হবে বলে জলদস্যুর হুমকি দিচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে এই ধরনের সংবাদ এখন পর্যন্ত আসেনি।’
জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য কিছু সংগঠন আছে। জলদস্যুদের সঙ্গে আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ আছে। অলিভিয়া বন্দরে আমাদের জাহাজ আটকে পড়ার পর আমরা কিছু কিছু জায়গায় সহযোগিতা নিয়েছি বলে সেখানে সফলতা পেয়েছি। যেকোনো মূল্যে আমাদের নাবিকদের বাংলাদেশের ফেরত আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।’