গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের হারিয়ে যাওয়া অধিকার ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে: টুকু
রংপুর ব্যুরো: বিএনপির সাবেক জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আওয়ামী লীগ কী বলল তা দেখার বিষয় নয়, বরং আওয়ামী লীগ কী হরণ করেছে সেটি আদায় করার আন্দোলন চলছে। আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিএনপির ১০ দফার সঙ্গে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা দাবি গণ দাবিতে পরিণত হয়েছে। গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভোট চোর সরকারকে উৎখাত করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের হারিয়ে যাওয়া অধিকার এবং ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।
সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে রংপুর বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হচ্ছে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আবারও একদলীয় শাসন কায়েম করা। আমরা সেটি হতে দেব না। আজকে জনগণ জেগে উঠেছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জেগে উঠেছে। আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। কারণ এখন মাঠে তো শুধুই বিএনপি আর বিএনপি। জনগণের অধিকার আদায়ে বিএনপি সক্রিয় আছে-আগামীতেও থাকবে।
গণঅবস্থান কর্মসূচীতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশীদ অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন হচ্ছে ভোট চোরের গডফাদার। কমিশন ভেঙে দিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে মানুষের অধিকার আদায়ের নির্বাচন করতে হবে। গণতন্ত্র হত্যাকারী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথ ছাড়বে না।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এই গণঅবস্থান বিকেল সাড়ে ৩টায় শেষ হয়। নতুন বছরের শুরুতে দলের এই কর্মসূচিতে রংপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে। গণঅবস্থান কর্মসূচিতে রংপুর বিভাগের আট জেলা, রংপুর সিটি করপোরেশন, জেলার আট থানার বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নন। এর আগে সকাল থেকেই গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। বিএনপির কর্মসূচিতে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, জীবনবীমা মোড় ও শাপলা চত্বর পর্যন্ত রাস্তার একপাশে চট বিছিয়ে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। এসময় রংপুর নগরীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন।
এতে বক্তব্য রাখেন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু, বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক বিশেষ সহকারী এম এ জলিল, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য বিলকিস ইসলাম, আখতারুজ্জামান মিয়া, ফরহাদ হোসেন আজাদ, আমিনুল ইসলাম, রংপুর জেলা আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, মহানগরের সদস্য সচিব এ্যাড. মাহফুজ উন নবী ডন, মহানগর কৃষক দলের আহবায়ক শাহ নেওয়াজ লাবু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব নুর হাসান সুমন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আল ইমরান সুজন, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নু রনবী চৌধুরী মিলন, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রেজেকা সুলতানা ফেন্সি, সাধারণ সম্পাদক আরজানা বেগম, জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব দিল মেরাজুল হক দুলু সহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। কর্মসূচির সভাপতিত্ব করছেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু। এসময় বক্তারা, বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়া, বাস থেকে নামিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। এর আগে সকালে কর্মসূচির শুরুতেই বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও প্রবাসে অবস্থান করা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের শিল্পীরা।
এদিকে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো ধরণের নাশকতা, সহিংসতা ও অরাজকতা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নগরীর প্রেসক্লাব চত্বর, বেতপট্টিস্থ মোড়, কাচারী বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম জানান, বিএনপি যদি গণঅবস্থান কর্মসূচির নামে রংপুরবাসীর কোনো ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে, তাহলে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করবে।
এছাড়াও সজাগ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে দেখা গেছে গণঅবস্থান ও সতর্ক অবস্থান নিয়ে নগরীতে সাধারণ মানুষজন আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করেছে।