এখন চলছে সংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এই মাসে জিকির-আজকারের সওয়াব ও মর্যাদা অনেক বেশি। হাঁটা-হাঁটি কিংবা যেকোনো কাজে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর জিকির-আজকার করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন—
‘অতপর যখন তোমরা নামাজ শেষ করো, তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করো। …’ (সুরা নিসা: ১০৩)
আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদেরকে দিনে-রাতে গোপনে-প্রকাশ্যে বেশি বেশি জিকির করার আদেশ দিয়ে বলেন—
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করো।’ (সুরা আহযাব: ৪১-৪২)
এখানে এমন একটি জিকিরের আলোচনা করা হচ্ছে, যেটি এই পবিত্র রমজানে সবসময় করা উচিত। জিকিরটি হচ্ছে—
لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই
বাক্যটি সাধারণ মনে হলেও আল্লাহর কাছে এর মর্যাদা অনেক বেশি। রমজান মাসজুড়ে এ ছোট্ট আমলেই মিলবে অনেক ফজিলত ও কল্যাণ। এ জিকিরটি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে এভাবে—
হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো-
لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’আর সর্বোত্তম দোয়া হলো- الْحَمْدُ للهِ আল-হামদুলিল্লাহ। (মেশকাত: ২৩০৬; তিরমিজি: ৩৩৮৩; ইবনে মাজাহ: ৩৮০০; মুসতাদারাকে হাকিম: ১৮৩৪)
সর্বোত্তম জিকির সম্পর্কে হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন—
মুসা আলাইহিস সালাম একবার আল্লাহর কাছে আরজ করেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এমন একটি দোয়া শিখিয়ে দিন, যার মাধ্যমে আমি আপনার জিকির করব এবং আপনার কাছে প্রার্থনা করব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন- হে মুসা! তুমি (শুধু) বলো- لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, হজরত মুসা (আ.) বললেন, হে আল্লাহ! আপনার সব বান্দাই তো এই জিকির করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন (আবারও) বললেন, তুমি বলো- لا إله إلا الله‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’হজরত মুসা (আ.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’কিন্তু আমি চাইছি আমাকে বিশেষ একটি দোয়া শিখিয়ে দেবেন; যা কেবল আমার জন্য হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন, হে মুসা! আমি ছাড়া সাত আসমান, সাত জমিন ও তার মাঝে যা রয়েছে সবকিছু যদি এক পাল্লায় থাকে আর (শুধু) لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্য পাল্লায় থাকে, তাহলে لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লা ভারি হবে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত উঠা-বসা, চলাফেরায় অবসর সময়ে এ জিকির বেশি বেশি পাঠ করা। আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণায় নিজের জিহ্বাকে সচল রাখা। তবেই মহান আল্লাহর কাছে সর্বোচ্চ সফলতা লাভ করবে মুমিন। আল্লাহতায়ালা আর ইরশাদ করেন—
‘এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান।’ (সুরা আহজাব: ৩৫)
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিকির
– প্রতিদিন ১০০ বার করে ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ করলে ১ হাজার সওয়াব লেখা হয় এবং ১ হাজার গুনাহ ক্ষমা করা হয়। (সহিহ মুসলিম: ৪/২০৭৩)
– ‘আলহামদুলিল্লাহ’র জিকির মিজানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং এটা সর্বোত্তম দোয়া। (তিরমিজি: ৫/৪৬২ ও ইবনে মাজা: ২/১২৪৯)
– ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ; ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’ এই বাক্যগুলো আল্লাহতায়ালার নিকট অধিক প্রিয় এবং নবী করিম (সা.) বলেন, পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের তুলনায় আমার নিকট অধিক প্রিয়। (সহিহ মুসলিম: ৩/১৬৮৫ ও ৪/২০৭২)
– যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ (সগিরা) গুনাহ থাকলেও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ৭/১৬৮)
– নবী করিম (স.) বলেন, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লিল আজিম’ এই কালেমাগুলো উচ্চারণে খুব সহজ, মিজানের পাল্লায় ভারী ও দয়াময় আল্লাহ তাআলার নিকট অতি প্রিয় । (সহিহ বুখারি: ৭/১৬৮)
– যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিমি ওয়াবিহামদিহি’ পাঠ করবে প্রতিবারে তার জন্য জান্নাতে একটি করে (জান্নাতি) খেজুর গাছ রোপন করা হবে । (তিরমিজি: ৫/৫১১)
– নবী করিম (স.) বলেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ’ হচ্ছে জান্নাতের গুপ্তধনসমূহের মধ্যে একটি গুপ্তধন। (সহিহ বুখারি: ১১/২১৩)
– নবী করিম (স.) বলেন, ‘সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ’- এই কালেমাগুলো হচ্ছে অবশিষ্ট নেকআমলসমূহ। (আহমদ: ৫১৩)
– নবী করিম (স.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করলেই দরুদ পাঠের বরকত পাওয়া যাবে।
-নবী করিম (স.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে ১০বার এবং বিকেলে ১০বার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আমার সুপারিশ পাবে। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব: ১/২৭৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী সর্বোত্তম জিকির لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। একইসঙ্গে অসীম ফজিলতপূর্ণ উল্লেখিত জিকিরগুলো করারও তাওফিক দান করুন। আমিন।