মুমিনের জন্য রমজানের শেষ দশক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কেননা এই দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন এবং পরিবার-পরিজনকে ইবাদতে উৎসাহিত করতেন। রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের তাগিদ আছে সহিহ হাদিসে। আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ ১০ দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) এত বেশি সাধনা করতেন যে অন্য কোনো সময়ে এ রকম সাধনা করতেন না। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৬)
নিম্নে রমজানের শেষ দশকের বিশেষ কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—
১. তাহাজ্জুদ আদায় : রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ আদায়ে অধিক মনোযোগী হতেন এবং পরিবার-পরিজনকেও উৎসাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া কখনো ভোর পর্যন্ত সারা রাত জেগে ইবাদত করতে বা এক নাগাড়ে পুরো মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬১৪)
২. ইতিকাফ করা : রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ ছিল প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রিয় আমল। তিনি মদিনায় আগমনের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ইতিকাফ ত্যাগ করেননি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৬)
৩. পরিবারকে ইবাদতে উৎসাহ দেওয়া : মুমিন শুধু নিজে ইবাদত করে না; বরং পরিবার-পরিজনকেও উৎসাহিত করে। আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন নবী (সা.) তাঁর লুঙ্গি কষে বেঁধে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
৪. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান : হাদিস বিশারদরা বলেন, রমজানের প্রত্যেক বেজোড় রাতই কদরের রাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের বিশেষ তাগিদ আছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) রজমানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান কোরো। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২০)
৫. বেশি বেশি দোয়া পড়া : রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর ক্ষমা অনুগ্রহ লাভে দোয়া পাঠে উৎসাহিত করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বললেন, তুমি বোলো—(উচ্চারণ) ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি’ (অর্থ) ‘হে আল্লাহ, আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। ’ (সুনানে তিরমিজি, আয়াত : ৩৫১৩)
৬. সদকাতুল ফিতর আদায় : শেষ দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সদকাতুল ফিতর আদায় বা আদায়ের প্রস্তুতি। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঈদের নামাজের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘প্রত্যেক দাস, আজাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের ওপর আল্লাহর রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক বা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ওপর ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫০৩)
৭. তাওবা করা : গুনাহ মাফের মাস রমজান। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)
এ জন্য রমজানের শেষ লগ্নে নিজের ভুল-ত্রুটি ও পাপের জন্য আল্লাহর দরবারে অধিক পরিমাণ তাওবা ও ইসতিগফার করা আবশ্যক।
আল্লাহ সবাইকে রমজানের অবশিষ্ট সময়টুকু আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকার তাওফিক দিন। আমিন। তথ্য সূত্র: কালের কন্ঠ।