ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করে সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে বিএনপি। দলটির দাবি, ১৪ থেকে ২২ মে পর্যন্ত রাজধানীতে টানা কর্মসূচির মাধ্যমে সংগঠনের সাংগঠনিক শক্তির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরও কার্যকর চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, হাইকোর্টের রায়ে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে আর কোনো বাধা না থাকায় এই রায়কে তারা আন্দোলনের বিজয় হিসেবে দেখছেন। দলটির পরবর্তী লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় নির্বাচন আদায় করা। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে ঈদুল আজহার পর থেকে আরও সক্রিয় কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।
এরই মধ্যে গুলশানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের অপসারণ দাবি করেছে। দলটির অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির সমর্থন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারকে এখনই একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে, যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।”
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়াচ্ছে, যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এ অবস্থায় ছোট পরিসরে একটি রুটিন কার্যক্রমভিত্তিক উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
দীর্ঘ ৩১ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইশরাক হোসেনের শপথের দাবি তুলে ধরে বিএনপি। হাইকোর্টের রায় তাদের পক্ষে আসায় আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেন ইশরাক। তবে তিনি বলেন, “সরকার পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় কী পদক্ষেপ নেয়, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা উপদেষ্টাদের অপসারণ ছাড়া দূর হবে না। আন্দোলন চলবে এসব দাবির পক্ষে।”
ইশরাক আন্দোলনের ফলে জনদুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার যদি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করত, তাহলে এমন কর্মসূচির প্রয়োজন হতো না।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা জনমনে সরকারের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করছে। তারা সতর্ক করে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার প্রবণতা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
তারা আরও জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সংস্কার চলমান থাকবে, পাশাপাশি নির্বাচন কার্যক্রমও চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমদ।