ইউক্রেনে রাশিয়া যদি পরমাণু হামলা চালায় তাহলে প্যারিস সেই পরমাণু হামলার কোনো জবাব দেবে না। বুধবার পাবলিক ব্রডকাস্টার ফ্রান্স ২-এর সাথে এক সাক্ষাকারে এই মন্তব্য করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
রাশিয়া এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের বিষয় নিয়ে যখন উত্তেজনাকর নানামুখী আলোচনা চলছে তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিজের অবস্থান তুলে ধরলেন। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ বলেন, তার দেশের পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে খুবই পরিষ্কার অবস্থানে রয়েছে। যার মূল ভিত্তি হচ্ছে দেশের মৌলিক স্বার্থ। অর্থাৎ ফ্রান্সের স্বার্থে আঘাত না আসা পর্যন্ত পরমাণু যুদ্ধে জড়াবে না ফ্রান্স ।
ম্যাক্রোঁ বলেন, এগুলো পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা আছে এবং রাশিয়ার পরমাণু হামলায় ফ্রান্স সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। একদিন ইমানুয়েল ম্যাক্রন টুইটার বার্তায় এও বলেছেন যে, তার দেশ বিশ্বযুদ্ধ চায় না।
ম্যাক্রনের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদ এবং কনজারভেটিভ এমপি জ্যঁ লুই থিয়েরিও। থিয়েরিও পলিটিকোকে বলেছিলেন যে তিনি ম্যাক্রোঁর কথা শুনে প্রায় ‘চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন’।, তিনি বলেছিলেন যে সর্বদা অত্যাবশ্যক ফরাসি স্বার্থ হিসাবে বিবেচিত বিষয়গুলো অনিশ্চয়তা থাকা উচিত।
বুধবারের সাক্ষাত্কারে, ম্যাক্রোঁ আরও বলেছিলেন যে এই সপ্তাহে ইউক্রেনের অসংখ্য শহরে রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরে, রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে ফ্রান্স আরও রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবে। প্যারিস ইতিমধ্যে কিয়েভে হাউইটজার, বহনযোগ্য বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ভারী সাঁজোয়া যান সরবরাহ করেছে।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, তার দেশ ইউক্রেনের চাহিদা মত সংখ্যায় অস্ত্র প্রদান করেনি। তিনি উল্লেখ করেন আমাদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য কিছু রাখতে বাধ্য।
এছাড়াও ম্যাক্রোঁ পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধ করার এবং ইউক্রেনের সাথে আলোচনার জন্য আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
গত সেপ্টেম্বর মাসে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যদি তার দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়ে তাহলে রাশিয়া তার ভাণ্ডারে থেকে সব উপায় উপকরণ ব্যবহার করবে।
পুতিনের এই বক্তব্যকে পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি পরমাণু যুদ্ধের হুমকি বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মস্কো ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন কোনো ইঙ্গিত তারা দেখতে পাচ্ছে না। রাশিয়া পরমাণু ব্যবহার করলে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সপ্তাহে বলেছিলেন যে তিনি কী করবেন বা করবেন না তা নিয়ে আলোচনা করা তার পক্ষে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ হবে।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয় প্রধান জোসেপ বোরেল গতকাল বলেছেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে পরমাণু হামলা চালায় তাহলে পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর জবাব পাবে যার ফলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবে তিনি বলেছেন, এই জবাব পরমাণু অস্ত্র দিয়ে হবে না।
সূত্র: আরটি