প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রেমিট্যান্সের প্রবাহ কোভিড পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে।
বুধবার (১৫ জুন) জাতীয় সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।
এ দিন প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম উচ্চ রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স হিসেবে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জিত হয় এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। সেই সুবাদে প্রবাস আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে সপ্তম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ১৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। বিগত ২০১৯-২০, ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের রেমিট্যান্সের গড় ছিল ১৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কোভিড পূর্ববর্তী তিন বছরের প্রথম ১০ মাসে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের গড় অপেক্ষা ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রাপ্ত প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। কাজেই, চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স হ্রাস পাচ্ছে না বলে বলা যেতে পারে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ কোভিড পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিড অতিমারির সময় প্রবাস আয়ে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় প্রবাস আয় হ্রাসের কারণসমূহ হলো: ২০২০-২১ অর্থবছরে শুরুতে কোভিড অতিমারিতে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে তাদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছিলেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ দেশে নিয়ে এসেছেন। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-১৯ অতিমারিকে সফলভাবে মোকাবিলা করে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এলেও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগকারী প্রধান প্রধান দেশের অর্থনীতিসমূহ এখনও স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসেনি। ফলে ওই দেশসমূহে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবাস আয় তুলনামূলকভাবে কম থাকায় রেমিট্যান্স পাঠানো হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ-যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। ফলে, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরেও অর্থের লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
কীভাবে রেমিটেন্স বাড়ানো যেতে পারে সে বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বরেন, গত এক যুগে বিদেশস্থ মিশনে শ্রম কল্যাণ উইং এর সংখ্যা ১২টি থেকে ২৯টিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই উইংসমূহ নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি ও বিদ্যমান শ্রমবাজারের সম্প্রসারণ, বিদেশে নিয়োগকর্তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, অভিবাসী কর্মীদের কর্মপরিবেশ, সুবিধা ও সমস্যাবলী সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ, অভিবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলাসমূহ পরিচালনায় আইনগত সহায়তা প্রদান, বিদেশে কারাদণ্ড প্রাপ্ত/কারাভোগরত কর্মীদের আইনানুগ সহায়তা প্রদান, বিদেশে আটককৃত বা বিপদগ্রস্ত কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা প্রদানসহ অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।