বিশ্বের যেকোনো দেশে ট্রেনের টিকিট কাটতে হলে যাত্রীকে সে দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বা বিদেশি নাগরিক হলে পাসপোর্ট ব্যবহার করে টিকিট কাটতে হয়। কারণ টিকিটে যাত্রীর পরিচয় বাধ্যতামূলক এবং এই পরিচয় যাচাই করেই টিকিট প্রিন্ট দেওয়া হয়। এর প্রধান কারণ যেকোনো দুর্ঘটনা বা স্যাবোটাজ অথবা সংকট পরবর্তীতে যাত্রীর পরিচয় বের করা।
অন্য কারণ হলো টিকিটের হস্তান্তর যোগ্যতা আইনত নিষিদ্ধ। সেটা আমাদের দেশেও প্রযোজ্য। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে যথাযথ যাচাইকরণের মাধ্যমে যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করার কাজটি আজ পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে টিকিট কালোবাজারি বন্ধের মতো দুঃসাধ্য কাজটি অতি সহজ পন্থায় করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে রেল যাত্রীদের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে টিকিট কালোবাজারি। বিগত কয়েক বছর ধরে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলা রেলের অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এই উন্নয়নের যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ, টিকিট কালোবাজারির অশুভ হস্তক্ষেপের কারণে।
স্বল্প পুঁজি আর সহজ পন্থায় অতি লাভের এই সুযোগ অনেকেই হাতছাড়া করতে রাজি নয়। ফলে দিনদিন ফুলে ফেঁপে উঠছে এই লাভজনক ব্যবসা। মাঝে মাঝে কিছু কালোবাজারি এবং বুকিং ক্লার্কের ওপর চালানো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার অভিযান, আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে যথাযথ যাচাইকরণের মাধ্যমে যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করার কাজটি আজ পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে টিকিট কালোবাজারি বন্ধের মতো দুঃসাধ্য কাজটি অতি সহজ পন্থায় করা সম্ভব হয়নি।
টিকিট কালোবাজারি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হলে টিকিটের হস্তান্তর যোগ্যতা বন্ধ করতেই হবে। অর্থাৎ যার নামে টিকিট, তাকেই ভ্রমণ করতে হবে। রেল আইনের ১১৪ ধারা (রেল আইন, ১৮৯০) মোতাবেক টিকিট হস্তান্তর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন ছাড়া দেশ থেকে টিকিট কালোবাজারি দূর করার আর দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই।
এজন্য রেলকে প্রথমেই নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারের সাথে আনুষ্ঠানিক সংযোগ স্থাপন করতে হবে। যাত্রীকে টিকিট ক্রয়ের আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারের সাথে যাত্রীর দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করে, তথ্য মিলে গেলে যাত্রীকে একটি পিন নম্বর দেওয়া হবে, এটি হবে একটি আইডেন্টিক্যাল নম্বর। যা পরবর্তীতে টিকিট ক্রয়ের সময় ব্যবহৃত হবে।
রেজিস্ট্রেশনের সময় যাত্রীকে একটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে। সেই মোবাইলে ফিরতি মেসেজে দেওয়া কোড নম্বর ইনপুট দিয়ে যাত্রীকে টু ওয়ে অথেনটিকেশন করে নিতে হবে।
যাত্রী তার পিন নম্বর দিয়ে টিকিট কাটবে। টিকিটে যাত্রীর নাম এবং যাত্রীর দেওয়া মোবাইল নম্বর সার্ভার থেকে অটোমেটিক প্রিন্ট হয়ে যাবে।
‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন ছাড়া দেশ থেকে টিকিট কালোবাজারি দূর করার আর দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই। সেটা আমি দায়িত্ব নিয়েই বলতে পারি।
এভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে প্রত্যেক রেল যাত্রীর ছবিসহ সকল তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভার থেকে স্থায়ীভাবে রেলের সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। ট্রেন ছাড়ার আধা ঘণ্টা আগে ট্রেনের গার্ড যাত্রীর ছবিসহ প্রিন্ট করা রিপোর্ট নিয়ে ট্রেনে উঠবেন।
রিপোর্ট নেওয়ার নিয়ম এখনো চালু রয়েছে, তবে সেখানে যাত্রীর বিস্তারিত কোনো তথ্য থাকে না। যে তথ্য দিয়ে গার্ড ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নিশ্চিত করতে পারবেন।
এছাড়াও ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নিশ্চিত করার আরও একটি উপায় আছে। ট্রেন ছাড়ার আগে ঐ ট্রেনের সকল যাত্রীর (জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভার হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে) ছবিসহ বিস্তারিত তথ্যে একটি ডাটা ফাইল রেল সার্ভার থেকে গার্ডের মোবাইল নাম্বারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
অনবোর্ড গার্ড তার মোবাইল বা স্মার্ট ডিভাইস থেকে প্রত্যেক যাত্রীর পরিচয় মিলিয়ে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে যাত্রীকে সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র রাখার প্রয়োজন নেই।
১৬ বছরের উপরে সবার জাতীয় পরিচয়পত্র কার্ড বা নম্বর আছে। ১২ বছরের উপরের জন্য জন্মসনদ নম্বর ব্যবহার করা যেতে পারে। এর নিচে কেউ একা ভ্রমণ করবে না। পারিবারিক ট্যুরে একের অধিক যাত্রী থাকলে, তাদের যেকোনো একজনের নামে টিকেট কাটলেই হবে, তবে তাকে অবশ্যই ভ্রমণ করতে হবে।
একজনের নামে ক্রয়কৃত টিকিট অন্য কেউ ব্যবহার করলে অর্থাৎ হস্তান্তরকৃত টিকিট পাওয়া গেলে সে যাত্রী/যাত্রীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ নীতি বাস্তবায়ন করলেই শুধুমাত্র টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা সম্ভব।