টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ রানের নাটকীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৫১ রান তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৪৭ রানে থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণ ছিল আগের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানো জিম্বাবুয়ের সামনে। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বল তুলে দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে। মহানাটকীয়তার মধ্যে শেষ হয়েছে ওই ওভার। বাংলাদেশ পেয়েছে বড় স্বস্তির এক জয়।
ব্রিজবেনে রবিবার গ্রুপ-২ এর ম্যাচটিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে ব্যর্থতার পরও নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটিতে লড়ার মতো পুঁজি গড়ে দলটি।
পরে তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস অসাধারণ এক ফিফটিতে ম্যাচটা প্রায় বের করে নিচ্ছিলেন। সাকিব সরাসরি থ্রোয়ে তাকে রান আউট করে বাংলাদেশকে প্রাণ দেন।
শেষ ওভারে মোসাদ্দেক বোলিংয়ে এসে দ্বিতীয় বলেই তুলে নেন উইকেট। কিন্তু রিচার্ড এনগারাভা পর পর দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকালে জিম্বাবুয়ের সামনে জয়ের পথ খুলে যায়।
তবে পঞ্চম বলে এনগারাভাকে নুরুল হাসান সোহান স্টাম্পড করেন। শেষ বলেও ব্লেসিং মুজারাবানিকেও স্টাম্পড করেন সোহান। জয়োল্লাস করে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তখনও অবশ্য টিভি আম্পায়ার মুজারাবানিকে আউটের সিদ্ধান্ত দেননি।
পরে দেখা যায় স্টাম্প পেরোনোর আগেই বল ধরেছেন সোহান। তাই নো বলের সিদ্ধান্ত আসে। একই সঙ্গে ফের মাঠে নামানো হয় দুই দলকে।
শেষ বলে তখন জিততে হলে ৪ রান নিতে হতো জিম্বাবুয়েকে। যে বলটা ছিল আবার ফ্রি হিট। তবে মোসাদ্দেকের ওই বলটা আর ব্যাটে-বলেই করতে পারেননি মুজারাবানি। তাই শেষ হাসি বাংলাদেশেরই।
নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে আসর শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় জয়ের মুখ দেখল। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরেছিল তারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে এর আগে একটির বেশি জয় পায়নি বাংলাদেশ।
ম্যাচে রং বদলের ঘটনা ঘটেছে এর আগেও। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তাসকিনকে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই চার হাঁকিয়ে দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দেন ওয়েসলি মাধেভেরে। তবে পরের বলেই থার্ডম্যানে ধরা পড়েন মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে।
তৃতীয় ওভারে ক্রেইগ আরভিনও বাউন্ডারি হাঁকানোর পরের বলেই তাসকিনের শিকার হন। মাধেভেরে ৩ বলে ৪ ও আরভিন ৭ বলে ৮ রান করেন।
প্রথম চার ওভার তাসকিন ও হাসান মাহমুদ করার পর পঞ্চম ওভারে আক্রমণে স্পিনার আনেন সাকিব। মোসাদ্দেকের ওই ওভারে ১১ রান তুলেন মিল্টন শুম্বা ও শন উইলিয়ামস। শেষ দুই বলে দুটি চার হাঁকান শন উইলিয়ামস।
ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে প্রথমে শুম্বাকে ফেরান মোস্তাফিজ। পরে ফিরিয়ে দেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজাকে। শুম্বা ১৫ বলে ৮ রান করেন। রাজা রানের খাতা খুলতে পারেননি।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে রেজিস চাকাভার সঙ্গে ৩৪ রানের জুটি উপহার দেন উইলিয়ামস। তাতে কিছুটা চাপ কাটে জিম্বাবুয়ের। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়ে এই জুটিও ভাঙেন তাসকিন। ১৯ বলে ১৫ রান করা চাকাভাকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান।
এরপর রায়ান বার্লকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই জমিয়ে তুলে উইলিয়ামস। শেষ ৩ ওভারে ৪০ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ের সামনে।
১৮তম ওভারে উইলিয়ামসের ফিফটি পূরণ হওয়ার সঙ্গে জিম্বাবুয়ে মোট ১৪ রান তুললে ম্যাচ জমে যায় আরও। শেষ দুই ওভারে ২৬ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ের সামনে। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে উইলিয়ামসকে সাকিবের রান আউট করে ফেরানো ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট বলতে হবে।
৪২ বলে ৮ চারে ৬৪ রান করেছেন উইলিয়ামস। ষষ্ঠ উইকেটে তার সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি উপহার দেওয়া রায়ান বার্ল ২৫ বলে অপরাজিত ২৭ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন সর্বাধিক ৩ উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোসাদ্দেক ও মোস্তাফিজ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুটা মোটেও ভালো করতে পারেনি টাইগাররা। পাওয়ার প্লেতে পারেনি প্রত্যাশা অনুযায়ী রান তুলতে। সৌম্য ও লিটনকে হারিয়ে মাত্র ৩২ রান তুলতে পারে। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ৬৩। তখন পর্যন্ত লড়াকু পুঁজি নিয়েও ছিল সংশয়।
পরে নাজমুল হোসেন শান্ত ফিফটি তুলে নিলে ৭ উইকেটে ১৫০ রানের পুঁজি গড়তে সক্ষম হয় সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দল। ৪৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করা শান্ত শেষ পর্যন্ত ৫৫ বলে ৭১ রান করেন। ৭টি চারের সঙ্গে হাঁকান এক ছক্কা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আফিফ হোসেনের। ১৯ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় ২৯ রান করেন তিনি। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলে ৮৭ রান।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বাধিক ২টি করে উইকেট নিয়েছেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও রিচার্ড এনগারাভা। ম্যাচসেরা হয়েছেন তাসকিন আহমেদ।