এস. কে সাহেদ, লালমনিরহাটঃ বীমা চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও টাকা পাচ্ছেন না লালমনিরহাটের ৫ বীমা কোম্পানির ৮হাজার গ্রাহক। এসব বীমা কোম্পানির কাছ থেকে গ্রাহকদের মোট পাওনা রয়েছে ২৭ কোটি টাকা। এসব কোম্পানিগুলো ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, সানলাইফ ইনস্যুরেন্স, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইনস্যুরেন্স, পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
বীমা চুক্তি মতে ওইসব কোম্পানিতে ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত টাকা জমিয়ে এখন সে টাকা তুলতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। বছরের পর বছর এসব বীমা প্রতিষ্ঠানের জেলা অফিস থেকে প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত ঘুরেও টাকা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। টাকা না পাওয়া গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অপমানের শিকার হচ্ছেন বিমার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গ্রাহকদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বীমা কোম্পানিতে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদিকে গ্রাহকের চাপে বাধ্য হয়ে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির আঞ্চলিক কর্মকর্তা নিজ কোম্পানির বিরুদ্ধেই করেছেন মামলা।
জেলার বীমা কোম্পানিগুলোর তথ্যমতে, জেলার ৮ হাজারের বেশি গ্রাহকের প্রায় ২৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এসব গ্রাহকের পাওনা রয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ৭০০ গ্রাহকের ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ২৫০ গ্রাহকের ২৮ লাখ, পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ২ হাজার ৬০০ গ্রাহকের ৩ কোটি ৭০ লাখ, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ১ হাজার ৪০০ গ্রাহকের ২ কোটি ২০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।
জানা গেছে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের লালমনিরহাট শাখার প্রায় ৩ হাজার বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বছরের পর বছর টাকা ফেরত পেতে ওই অফিসে যোগাযোগ করলে হয়রানি করছে কর্তৃপক্ষ। একই চিত্র জেলার সানলাইফ, পপুলার, পদ্মাসহ অধিকাংশ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির।
ভুক্তভোগী গ্রাহক মিনতি রাণী জানান, সানলাইফ ইনস্যুরেন্সে বিমা করার সময় তাকে বলা হয়েছিল বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সব টাকা ফেরত দেয়া হবে। এখন চার বছর ধরে অফিসে এসে ধরনা দিয়ে টাকা ফেরত পাচ্ছেন না তিনি।
সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, লালমনিরহাট সার্ভিস সেল অফিসের সিনিয়র জি এম আলগাজী রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলেও তারা গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে কোনো সমাধান দিচ্ছেন না। এমনকি নেই কোনো আশ্বাসও। ফলে নিজেরাই প্রতিনিয়ত অপমানের শিকার হচ্ছেন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক মাঠকর্মী।
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের লালমনিরহাট জেলা অফিসের রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘গ্রাহকদের বিমার মেয়াদ চার বছর আগে শেষ হলেও তাদের টাকা ফেতর দিচ্ছে না কোম্পানি। তাই বাধ্য হয়ে নিজ কোম্পানি সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধেই মামলা করেছি। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।’
তবে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।