শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলে শোভা পাচ্ছে মনোরম দৃশ্য। পুরো মাঠ ঢেকে আছে হলুদ বর্ণের চাঁদরে। সুন্দর ও অপরূপ দৃশ্যের আলোকে মধু চাষীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সরিষার ক্ষেতে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহের কাজে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এই মৌসুমে ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছি দিয়ে শত শত বাক্স স্থাপন থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌ চাষীরা। ওই সব বাক্স থেকে পোষা মৌমাছিগুলো উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষার হলুদ ফুলে।
মৌ চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। তাতে একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ৬ থেকে ৭টি মৌচাকের ফ্রেম থাকে। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করে থাকে চাষিরা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন।
উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের কায়েমপুর গ্রামে, বাড়াবিল উত্তরপাড়া, নরিনা ইউনিয়নের পাড়কোলা, জুগ্নীদহ উত্তরপাড়া, জুগ্নীদহ ঈদগাঁ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মধু আহরণে সবাই ব্যস্ত। কেউ বাক্স থেকে মধু বের করছেন, আবার কেউ বাক্স ঠিক করে দিচ্ছেন, কেউবা ড্রামে মধু ভরছেন। ক্রেতারা এসে মধু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি কেজি মধু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।
সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জামালপুর থেকে আসা মধু ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বলেন,আমি তেইশ বছর হলো মধু আহরণ ব্যবসার সাথে জড়িত।প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা এখানে মধুর জন্য ১২০ মৌবাক্স স্থাপন করেছি।সাত থেকে দশ দিন পরপর মধু আহরণ করা হয়। মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। যার উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে।
বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি ৭টি ফ্রেমের সাথে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের সিট। পরবর্তীতে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। তিনি আরো বলেন, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি।
অন্য বছরের তুলনায় মধুর দাম এবার কম, গত বছর এক মন মধুর দাম ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। আর এ বছর এক মন মধুর দাম হচ্ছে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা মত। তবে মৌ খামারীরা আশায় আছেন হয়তো মধুর দাম বাড়বে। যদি না বাড়ে তাহলে তারা লোকশানে পড়বেন বলে জানান তিনি।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মাদ আব্দুস ছালাম জানান, এবার চলতি মৌসুমে শাহজাদপুর উপজেলায় সরিষা চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার সরিষার আবাদকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মৌ খামারী বসেছেন ১১ জন এবং মৌ বাক্সের সংখ্যা এক হাজার ২০০। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি ফুলের উপর বসলে পরাগায়নে ফসল ভালো হয় এবং ১৮ থেকে ২০ ভাগ ফলন বেড়ে যায়।
এই উপজেলায় সরিষা ক্ষেত থেকে গত বছর মধু উৎপাদন হয়েছিল ১৯ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন ও মধু আহরণের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি কর্মকর্তা জানান। কৃষি অফিস থেকে মৌ খামারীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।