#২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে শিক্ষায় ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শিক্ষা খাতে বরাদ্দের এ তথ্য তুলে করেন।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। একই মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তৃতায় অথর্মন্ত্রী বলেন, সরকার শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে কাজ করছে এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে এ খাতে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে আসছে। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০৪১ লক্ষ্য অর্জনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন। এ লক্ষ্য সামনে রেখে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
‘বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় করোনাকালীন অনলাইনে শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা খাতে ব্যয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পরিবীক্ষণের দিকেও আমরা বিশেষ নজর দেব।’
অতিমারির ক্ষতি পোষাতে বিশেষ উদ্যোগ:
প্রস্তাবিত বাজেটে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষতি পোষাতে কী কী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার তা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তবে এ অতিমারির নেতিবাচক প্রভাব থেকে শিক্ষা খাতকে মুক্ত রেখে সার্বিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
‘জীবন সুরক্ষা নিশ্চিতে করোনাকালীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হলেও অনলাইন এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রেখেছিল সরকার। বর্তমানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় সরকার ২০২২ সালের মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দিয়েছে এবং সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে, বিদ্যালয় পুনরায় খোলার পরও শিক্ষার্থীদের পাঠচর্চা ও পাঠে মনোযোগী রাখার লক্ষ্যে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে ‘ঘরে বসে শিখি’ পাঠদান কর্মসূচি সম্প্রচার চলমান রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য শিক্ষকরা নিয়মিত তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোন এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।’
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের গুরুত্ব প্রদান:
প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুসহ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সমাজের সব শিশুর মূলধারার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া নিশ্চিতকল্পে একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। মাঠপর্যায়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতিবন্ধিতা সহায়ক উপকরণ (হুইলচেয়ার, ক্র্যাচ, শ্রবণযন্ত্র, চশমা ইত্যাদি) ক্রয় ও বিতরণের জন্য আমরা প্রতিটি উপজেলা/থানায় চাহিদার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ প্রদান অব্যাহত রেখেছি। চলতি শিক্ষা বাজেটের চেয়ে বরাদ্দ বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। তবে শিক্ষাবিদরা শিক্ষা খাতের জন্য প্রস্তাবিত এ বরাদ্দকেও অপ্রতুল বলছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘এ বৃদ্ধি অত্যন্ত সামান্যই। কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে এর থেকেও বেশি বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় হলে উন্নত দেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তা বাস্তবায়ন অসম্ভব।’
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক শেখ একরামুল কবির বলেন, ‘শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। না হলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন অধরাই থেকে যাবে। আমরা সরকারের কাছে শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধির দাবি জানাই।’