প্রকৃতির রাজ্যে নানা বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে যুক্তরাজ্যের টেমস নদীর উৎস শুকিয়ে গিয়েছে। টেমসের উৎস এর আগেও কালেভদ্রে শুষ্ক হয়েছে। তবে এবার তা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ মাত্রায় শুকিয়েছে বলে মনে করাচ্ছেন পরিবেশবিদরা।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর জেরে খরার কবলে পড়তে পারে যুক্তরাজ্য। এমনকি পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির তেমন প্রস্তুতিও নেই বলে মনে করছেন তাঁরা।
যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিস বলছে, গড় বৃষ্টির দিক থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসটি ছিল ১৯৩৫ সালের পর সব চেয়ে শুষ্ক। এ সময়ে ২৩.১ মিলিমিটার গড় বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। সে দেশের কিছু কিছু অংশে জুলাই মাসটি ছিল এযাবৎকালের সব চেয়ে শুষ্ক মাস।
ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত টেমস নদী ২১৫ মাইল প্রশস্ত। প্রাকৃতিক জলপ্রবাহই এ নদীর উৎস। সাধারণত গ্রীষ্মকালে এই উৎসটি শুষ্কই থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর আগের বছরগুলির তুলনায় নদীর জল সেখানে অনেক কমে গিয়েছে।
নদী সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা রিভার্স ট্রাস্টের এক কর্মকর্তা এলিসডেয়ার নাউল বলেন, উৎসটি খুবই অগভীর হয়ে পড়েছে। এর ফলে নদীতেও জল কমেছে। এবং সেটা এতটাই যে, টেমসের শুকনো জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। অথচ, এই সময়ে ওই শুষ্ক জায়গা রীতিমতো ভেজা থাকার কথা ছিল।
এক দিকে নজিরবিহীন গরম এবং অন্য দিকে কম বৃষ্টিজনিত পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের দুটি জল সরবরাহ কোম্পানি ইতিমধ্যে হোসপাইপ ও স্প্রিংকলার সিস্টেম ব্যবহারের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। টেমস ওয়াটার নামের আরও একটি কোম্পানি একই রকম ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে চার দিনের চরম তাপমাত্রাজনিত সতর্কতা কার্যকর হয়েছে। গত মাসে যুক্তরাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছনোর পর দেশটির আবহাওয়া দপ্তর প্রথমবারের মতো এ ধরনের সতর্কতা জারি করেছিল। এটি ছিল যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও জলসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ হান্না ক্লোক বলেন, কম বৃষ্টির কারণে নদী ও জলাধারাগুলিতে জলস্তর নীচে নেমেছে। সেখান থেকেই ফসলের আবাদ ও খাওয়ার জল এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জল সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
ক্লোক বলেন, আগস্টে যদি বৃষ্টি না হয়, অর্থাৎ তখন যদি শুষ্ক শীতের মৌসম থাকে, তাহলে বসন্তকাল এবং পরবর্তী গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড বিপদে পড়ে যাব আমরা। তখন সত্যিই আমাদের আর কোনো জলের উৎস থাকবে না।
তিনি মনে করেন, হোসপাইপ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে জল ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের মনে সচেতনতা তৈরি করা হবে ঠিকই। তবে এর চেয়ে বেশি জরুরি হল, জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করা ও প্রয়োজনীয় নীতি তৈরি করা।-জি নিউজ