একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশন ও বছরের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এটাই হবে রাষ্ট্রপতির শেষ ভাষণ।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সংসদ কক্ষে এ অধিবেশন শুরু হয়। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এর আগে বিকাল ৩টায় সংসদ ভবনে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতাসহ কমিটির সদস্যরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
মহান ব্যক্তিত্বদের স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, গত বছর আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি। আমি তাঁদের রুহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক দুই-পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার আটশত চব্বিশ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক নয়-সাত বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক চার-চার বিলিয়ন ডলারে।
সরকার কর্তৃক কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করে আব্দুল হামিদ বলেন, বিগত অর্থবছরে মোট ১৫ হাজার ১৭২ দশমিক সাত-নয় কোটি টাকা ভরতুকি এবং ৩৯ হাজার কোটি টাকা সরল সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’-স্লোগান নিয়ে ৫০ লক্ষ ১০ হাজারের অধিক নিম্নআয়ের পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ২৪ টাকা দরে ৫ কেজি আটা বিতরণ করছে। খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রয় (ওএমএস) চালু আছে দেশের সকল উল্লেখযোগ্য হাট-বাজারে। এছাড়া, সরকার টিসিবি’র মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ীমূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল সরবরাহ করছে।
পেনশন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ৬০ বছরের উর্ধ্বে দেশের সকল নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়াও বিগত অর্থবছরে সারাদেশে ১০ লক্ষ ৪০ হাজার উপকারভোগীকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগী ১২ লক্ষ ৫৪ হাজার জনকে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতির সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনা অতিমারি মোকাবিলায় টিকাদান এবং সামাজিক তৎপরতার ওপর ভিত্তি করে ‘নিক্কেই কোভিড-১৯ রিকোভারি সূচক’-এ বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ১৫ কোটি জনগণকে কোভিড টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনেছে। বর্তমানে চতুর্থ ডোজ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
মেট্রোরেলের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসাবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম উড়াল মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকারের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি এমআরটি’র মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে।
রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষে তার এই ভাষণের ওপর আনা প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা হবে। সবশেষে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।
অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন দেন। তারা হলেন— রমেশ চন্দ্র সেন (ঠাকুরগাঁও-১), একেএম শাজাহান কামাল (লক্ষ্মীপুর-৩), ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (কুমিল্লা-৩), কাজী ফিরোজ রশীদ (ঢাকা-৬) ও সালমা চৌধুরী (মহিলা আসন-৩৪)। স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তারা সংসদের বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২ (অধ্যাদেশ, ২২ (অধ্যাদেশ নং-১, ২০২২) উত্থাপন করেন। এরপর শোক প্রস্তাব আনা হয়।
প্রতি বছরই সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতির মেয়াদও শেষ হবে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল।