Imam Hossain
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ফাতিন সাদাব লিয়ান। যার শখ হলো মানুষের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যােগ গ্রহণ করা। শখেরবসে নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করলেও এখন ফাতিন এইসব উন্নয়নমূলক কাজকে দায়িত্ব মনে করে । এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তার সংগঠন পেয়েছে বেসিস জাতীয় আইসিটি পুরষ্কার, আইসিটির অস্কার খ্যাত আ্যপিকটা পুরষ্কারের মনোয়ন, মানসিক স্বাস্থ্যে খাতে বিশেষ অবদান রাখায় শিশুদের নোবেল পুরষ্কার খ্যাত আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরষ্কার ২০২৩ এর মনোয়ন পেয়েছেন ফাতিন।
২০২১ সালে করানোর মধ্যে যখন বেশিরভাগ সবাই মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত তখন মানসিকভাবে মানুষকে ইতিবাচক করে তুলতে সচেতনতামূলক ব্লগ লেখা শুরু করলেন সেই সময়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ফাতিন এবং তৈরি করলেন নিজের ওয়েবসাইট। সেখানে ইয়াং ট্যালেন্টদের ইন্টারভিউ নিতেন। এই যাত্রার মধ্যে সেই বছরের প্রায় শেষের দিকে নিজের স্কুলের সিনিয়রের সুইসাডের খবর পেয়ে, শুরু করলেন একটি অলাভজনক সংগঠন সোলাস টু ইউথ। যেটার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞান দেওয়া। তার সংগঠনের সদস্যদের সহয়তায় স্কুল পর্যায়ে ওয়ার্কশপ নেওয়া, লিফলেট বিতরণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিসংখ্যান করার কাজ শুরু হলো।
ফাতিন পড়ালেখার পাশাপাশি এইসব উন্নয়নমূলক কাজ করছেন নিজের দায়িত্ববোধ থেকে। ফাতিনের বিশ্বাস এই সমাজে প্রতিটি সমস্যাতেই সমাজের বেশিরভাগ সবার দোষ রয়েছে;কেউ সমস্যার সমাধান না করে দোষী, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা সৃষ্টি করে দোষী, কেউ সমস্যা সৃষ্টিতে সাহায্য করে দোষী, কেউ সচেতনতা না ছড়িয়ে দোষী আবার কেউ সচেতন না হয়ে দোষী।
প্রতিদিন নিত্যনতুন সমস্যা যখন নতুন মাত্রায় রূপ নিচ্ছে তখন সেখানে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়ে নিজের দায়িত্ব ঠিকই পালন করে চলেছেন ফাতিন। সময়ের সাথে ফাতিনের কাজের পরিধি বাড়তে লাগলো।
২০২২ সালে এসে নবম শ্রেণি পড়ুয়া ফাতিন তার স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের ব্লাড রিলেটেড সমস্যা এবং সেই ছাত্রের মা-বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা শুনে ব্লাড ডোনেশন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে যেয়ে ফাতিন দেখে বাংলাদেশে গড়ে প্রতিবছর ৫৫ হাজার মানুষ মারা যায় শুধু মাত্র রক্তের অভাবে এবং স্বেচ্ছায় রক্ত দানের হার মোট চাহিদার মাত্র ৩৩ শতাংশ। ব্লাড ডোনেশন প্রসেসকে আরো সহজ, জনপ্রিয় ও তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তুলতে চট্টগ্রামের রিজওয়ানুল হক ও ময়মনসিংহের ফজলে রাব্বিকে নিয়ে ‘ব্লাডব্যাগ’ নামক আ্যপের কাজ শুরু করলো ফাতিন, সেখানে ফাতিন কোলাবোরেশনের বিষয়বস্তুগুলো দেখাশোনা করেন। দীর্ঘ চেষ্টা ও গবেষণার মাধ্যমে তারা একটি পাইলট প্রজেক্ট জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেছে এবং বেশ ভালো সারা পাচ্ছে।ব্লাডব্যাগ বিষয়ে ফাতিন বলেন,” আমরা প্রায় ১ মাসে ১৫০ এর অধিক রক্তের আবেদন পেয়েছি, আপাতত আমাদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক কাজ হচ্ছে। আমরা চাই ধীরে ধীরে সারাদেশে আমাদের সেবা ছড়িয়ে দিতে।”
ইতিমধ্যে এই উদ্যোগটি দেশের আইসিটি খাতের সবথেকে সম্মানজনক পদক বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি পুরষ্কার পেয়েছে এবং আইসিটির অস্কার খ্যাত অ্যাপিকটা পুরষ্কারের মনোয়ন ও পেয়েছে।
ফাতিনের স্কুলে সহপাঠীদের মধ্যে পড়ালেখার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজে যোগ দিতে ফাতিন এখন একটি অনুপ্রেরণার নাম। স্কুলে শিক্ষার্থীদেরকে ইনোভেটিভ করার লক্ষ্যে ফাতিন ও তার দুই বন্ধু ফারদিন,সাহিল মিলে স্কুলের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সহয়তায় প্রতিষ্ঠা করে গ্রেগরীয়ান ইনোভেশন ক্লাব।
নেদারল্যান্ড ভিত্তিক কিডস রাইটস, আমেরিকা ভিত্তিক রিসলিউশন প্রজেক্ট এর মতো আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাত কিছু সংগঠনের সাথে ফাতিন কাজ করে যাচ্ছে তার উদ্যোগ এবং উদ্দেশ্য সফল করতে।
ফাতিন বিশ্বাস করে, ” আজকে আমরা যদি আমাদের কিশোর কিশোরীদের সমস্যায়, তাদের সাথে থেকে তাদের সমস্যা সমাধান করে তাদেরকে নতুনভাবে খুশি হয়ে বাঁচার জন্য সহযোগিতা করতে পারি। তবে, এর প্রতিদান স্বরুপ তারাও সেই খুশি মন নিয়ে আমাদের সবাইকে একটি সহযোগি মানসিকতার খুশি পৃথিবী উপহার দিবে”।