পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। তলিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমির ফসল, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কাজীপুরের মেঘাই পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, চলমান ভারী বর্ষণে যমুনার পানি বৃদ্ধি ও চরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদী পাড় এবং চরাঞ্চলের মানুষ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর উপজেলার ২০৩ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে রোপা আমন ও আউশের ক্ষেত, বীজতলা, সবজি, কলার বাগান, আখসহ বিভিন্ন আবাদি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার তালিকা প্রণয়ন না হওয়ায় এসব উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।
সিরাজগঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান বলেন, চৌহালী উপজেলা তিনটি নিচু এলাকায় পানি ঠুকেছে। বন্যা কবলিত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। চাহিবামাত্র সরবরাহ করা হবে।
চৌহালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হেকমত আলী জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলার ২১৯০টি পরিবারের অন্তত সাড়ে আট হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের তালিকা তৈরি করে জেলা অফিসে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে যমুনার পানি বেড়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গতকাল বিকালে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া বুধবার মধ্যরাতে উপজেলার হাসনাপাড়া স্পারের প্রায় ২০ মিটার ধসে যায়। এতে নতুন করে আরো ১০ গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।
পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে সারিয়াকান্দি উপজেলার হাসনাপাড়ায় নদীভাঙন রোধে নির্মাণ করা স্পার-২-এর গোড়ায় ধস নামে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নদীতে পানি বৃদ্ধি ও স্পার ধসের ঘটনায় মাইকিং করে এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। এ সময় এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে বস্তা ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করে। পরে পাউবো ঠিকাদারের মাধমে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে।
বগুড়া পাউবো সূত্র জানায়, যমুনার পানি সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে গতকাল বেলা ৩টায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর বাঙ্গালী নদীর পানির বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সারিয়াকান্দি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১২ হাজার ২৫০টি। এসব পরিবারের প্রায় অর্ধলাখ সদস্য পানিবন্দি। এছাড়া উপজেলার ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠেছে।
অন্যদিকে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি চতুর্থ দফায় বেড়ে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্ন ও চরাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।
কুড়িগ্রাম পাউবোর তথ্যানুযায়ী, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্রের পানি জেলার চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সামান্য হ্রাস পেয়ে ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তার পানি কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি না বাড়লেও নতুন জেগে ওঠা চরগুলোর ঘর-বাড়ি ডুবে আছে। চরাঞ্চলের চারণভূমি তলিয়ে থাকায় গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি স্থিতিশীল অবস্থায় বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।