গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে ঢাকায় নিয়ে ধর্ষণ ও মানবপাচারের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল শনিবার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব এ কথা জানায়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তোফায়েল আহম্মেদ, কামরুল আহম্মেদ, খালেদ মাসুদ হেলাল ও মো. জামাল।তাঁদের কাছ থে
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতারণার শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে, রামপুরা এলাকায় মানবপাচার ও প্রতারকচক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও টিকিট সরবরাহ করে। এর মাধ্যমে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকার তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩-এর একটি দল গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের এক নারীকে সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে রামপুরায় চক্রের সদস্য কামরুলের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে ওই নারীকে আটকে রেখে চক্রের সদস্য তোফায়েল ধর্ষণ করেন। ওই নারী ফোন করে র্যাবের কাছে সহায়তা চান। খবর পেয়ে র্যাবের একটি দল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।
উদ্ধার হওয়া নারী জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তোফায়েল গৃহকর্মী হিসেবে তাঁকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলেন। এরপর সৌদি আরব যেতে হলে আরবি ভাষা শিখতে হবে—এ কথা বলে ঢাকায় এনে কামরুলের বাসায় আটক রেখে তাঁকে ধর্ষণ করেন।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কামরুলের নামে চট্টগ্রাম কোর্টে একটি চেক জালিয়াতির মামলা এবং মৌলভীবাজারের আদালতে একটি ব্যাংকের ১৮ লাখ টাকা জালিয়াতির একটি মামলা রয়েছে। তাঁর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৩৮ লাখের বেশি টাকা আছে। মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার তাঁর অন্যতম সহযোগী জামাল। মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের লাইসেন্স ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। এক মাস আগে মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের এমডি মানবপাচারের দায়ে র্যাব-৩-এর হাতে গ্রেপ্তার হন।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রটি বিভিন্ন ট্যুর ও ট্র্যাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক পাঠায়। এ জন্য জনপ্রতি হাতিয়ে নেয় পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা। এভাবে প্রায় ৫০০ লোকের কাছ থেকে অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। গত পাঁচ বছরে চক্রটি অবৈধভাবে শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে, যারা সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত দুই বছরে অন্তত আটবার অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করেছে চক্রটি।
কে ২৭টি পাসপোর্ট, একটি কম্পিউটার, ১০০টি ভিসার কপি, ১২৫টি টিকিট, চারটি মোবাইল ফোন ও প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।