দুবাই ভিত্তিক মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এমএলএম ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের নামে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে বন্ধ হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। আর এই ১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের বলে অভিমত সাইবার বিশ্লেষকদের।
ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। শুক্রবার ১৮ আগস্ট রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন একাধিক সাইবার বিশ্লেষক এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ।
সাইবার বিশ্লেষক মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এটা একটা স্ক্যাম। বাংলাদেশে তাদের কোনো অফিস নেই, কোন নির্দিষ্ট জনকাঠামো নেই। স্থানীয় কিছু এজেন্টদের দিয়ে তারা মানুষের থেকে টাকা নিতো। তারপর তাদেরকে আবার অন্য বিনিয়োগকারীদের আনতে বলতো। এমএলএম বা পনজি যেভাবে কাজ করে আর কি। ডেসটিনি যেমন গাছ দেখিয়ে টাকা নিয়েছে, এরা ক্রিপ্টোকারেন্সি বলে সাধারণ মানুষদের থেকে টাকা নিয়েছে।
দেড় লাখ ডলার খোয়ানো ভুক্তভোগী মাহবুব আলম বলেন, তিনি প্রায় দুই বছর ধরে এই কোম্পানির সঙ্গে আছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে সিইও পদমর্যাদার ব্যক্তি রয়েছেন ৪০০ জনের অধিক। শুধু রাজধানীতেই এই সিইওদের আড়াইশ অফিস উদ্বোধন হয়েছে। আর সিইও হওয়ার তালিকায় রয়েছেন আরও এক হাজার ব্যক্তি। তিনি বলেন, একেকজন সিইও এর অধীনে রয়েছেন অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ জন।
মাহবুব আলম নিজেও একজন সিইও উল্লেখ করে বলেন, ৯৩০ ডলার বা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ৪৫ হাজার টাকা লাভ দিতো কোম্পানি। ৫০০ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ২২ হাজার টাকা লাভ দিতো।
এছাড়া কেউ যদি ৩ হাজার ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করে এবং ১৫ জন ব্যক্তিকে কোম্পানিতে যুক্ত করে আর এই ১৫ জন মিলে যদি ৯ হাজার ডলার বিনিয়োগ করে তাহলে ৩ হাজার ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করা ব্যক্তি প্রতি মাসে অন্তত ৪ লাখ টাকা করে লাভ পেয়ে থাকে।
এভাবেই শত শত যুবককে কোটিপতি বানিয়েছে এই কোম্পানি। তবে হঠাৎ করে কোম্পানিটি উধাও হয়ে যাবে তিনি তা বিশ্বাস করতে পারছেন না। যদিও গত ১৫ দিন যাবত টেকনিক্যাল প্রব্লেম বলে এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কমিশন বন্ধ রেখেছিল। এখানে যারা টাকা দিচ্ছিলেন তারা আর টাকা উঠাতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনও লেনদেন হচ্ছে না। শুক্রবার পুরোপুরিভাবে এমটিএফই তাদের সিস্টেম বন্ধ করে দিয়েছে।
জানা গেছে, অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং বা বাইন্যানসের মাধ্যমে তারা টাকা নিতো। পরে স্থানীয় এজেন্টরা সেটি বাইরে পাচার করতো। বাংলাদেশে এসএসসি এবং এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মুনাফার লোভ দেখিয়ে টার্গেট করা হতো।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এই কোম্পানির লেনদেন বা ট্রেড হতো সপ্তাহে ৫ দিন বাংলাদেশি সময় রাত ৭ থেকে রাত ১টা পর্যন্ত। সোমবার থেকে শুক্রবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ট্রেড হলেও সিইওদের জন্য লেনদেন হতো শনিবারসহ সপ্তাহে ৬ দিন। রবিবার বন্ধ থাকতো।