রাজধানীর নিউ মার্কেটের পাশের নিউ সুপার মার্কেটের আগুন দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা পরও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। মার্কেটের ভেতরে কোথাও কোথাও এখনো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে পলাশী ফায়ার স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শরিফুল ইসলাম জানান, সাড়ে ৩ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও মার্কেটের ভেতরে এখনও কোথাও কোথাও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটা ইউনিট এখনো কাজ করছে।
এর আগে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে আগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে আগুন নিয়ন্ত্রণে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট যুক্ত হয়। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও কাজ করে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী।
এদিকে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় আশপাশের বেশ কয়েকটি মার্কেট বন্ধ আছে। এ কারণে এসব মার্কেটের কয়েক হাজার দোকানপাটে বেচাকেনা হচ্ছে না। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে এই আগুনে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার ভোর থেকে সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ। বন্ধ আছে বাটা সিগন্যাল থেকে নিউ মার্কেটে যাওয়ার পথও। মূলত আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কাজ যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য পথ বন্ধ রাখা হয়।
ফলে আসন্ন ঈদে কেনাকাটায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। অনেকেই এসব এলাকায় এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এসব এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নিউ মার্কেট এলাকার নূরজাহান মার্কেট, গ্লোব সুপার মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট, চাঁদনী চক, নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট ও বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেটেরে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এদিকে নিউ সুপার মার্কেট ও গাউছিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী ওভারব্রিজ ভাঙার সময় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে অভিযোগ করেছেন মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওভারব্রিজটি মধ্যরাতে ভাঙা শুরু হয়। সে সময় বৈদ্যুতিক তার থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।
তিনি বলেন, ‘ভোরে আমাকে সিকিউরিটি গার্ড ফোন করে বলেন, পূর্ব পাশের ওভারব্রিজ ভাঙছে। আমি বললাম, ওইখানে ইলেকট্রিক লাইন আছে। আমি দ্রুত সেখানে চলে আসি। এসে ১০ মিনিটও দাঁড়াতে পারি নাই, এরই মধ্যে আগুন লেগে যায়।’
আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন তাৎক্ষণিক এক ব্রিফিংয়ে পর পর সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি-না তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অগ্নিকাণ্ডের পর নিউমার্কেট এলাকা পরিদর্শন করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা শহরে পর পর কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো নাশকতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মার্কেটে আগুনের ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনার পেছনে কোনও নাশকতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে রাজধানীর বড় বড় মার্কেট এবং প্রতিষ্ঠানে আগুনের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিভিন্ন মার্কেটে আগুনের ঘটনা ষড়যন্ত্র বা নাশকতা কি-না তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়টি জড়িত আছে কি-না তাও তদন্ত করে দেখতে হবে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে হবে। সবাইকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। সবাইকে নিজস্ব উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।