চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের মধ্যে দ্রুত, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) জাতীয় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণে ৭ হাজার ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন করেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যোগদান করেন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম প্রকল্পের বিষয়ে ব্রিফ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ৮ হাজার ৭৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের অর্থায়ন ৫ হাজার ৯২৯ কোটি ৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক অর্থায়ন হিসেবে প্রকল্প সহায়তা রয়েছে ২ হাজার ৮১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। ৬ প্রকল্পের মধ্যে তিনটি নতুন প্রকল্প রয়েছে এবং বাকী তিনটি সংশোধিত প্রকল্প ।
চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের মধ্যে যোগযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে অনুমোদিত প্রকল্পটি হল-‘কুমিল্লা (ময়নামতি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ধরখার) জাতীয় মহাসড়ককে (এন-১০২) চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ’। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৭ হাজার ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা (ময়নামতি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ধরখার) জাতীয় মহাসড়ককে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সমন্বিত উভয়পার্শ্বে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চারলেনে উন্নীত করা হবে। এর ফলে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের মধ্যে দ্রুত, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে।
জুলাই ২০২২ হতে জুন ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের আঞ্চলিক যোগযোগ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং একইসাথে চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হবে।
একনেক বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কয়েকটি অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনার পাশাপাশি চাষযোগ্য সকল জমিতে আবাদ করার মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আবারও গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, কোন চাষযোগ্য উর্বর জমি যেন অনাবাদী না থাকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার নির্দেশনা পুর্নব্যক্ত করেছেন। একইসাথে তিনি নিউক্লিয়ার মেডিসিনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, হাসপাতালের ইক্যুপমেন্টের যথাযথ ব্যবহার এবং হাসপাতালগুলোতে ডায়ালাইসিস সুবিধা বাড়াতে স্টাফ ও টেকনিশিয়ানদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়া, একনেক বৈঠকে সরকার প্রধান দেশে মাশরুম চাষ বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আশা করি অক্টোবর থেকে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে যাবে এবং সেই অবস্থা চলতে থাকবে। একইসাথে তিনি আমন ও বোরো ধানের ফলন এবার ভাল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ছিল কৃষকদের জন্য আর্শীবাদস্বরুপ।‘আশা করি-মূল্যস্ফীতি আমাদের উপর আর খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, কেননা আগামী মাস থেকে এটি কমে আসবে।’
আন্তর্জাতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে, সেটি অব্যশই অস্বীকার করা যাবে না। যুক্তরাজ্যের মত উন্নত দেশে এখন দশ শতাংশের উপরে মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে।আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকায় বাংলাদেশেও সরকার তেলের দাম হ্রাস করেছে। আশা করি-আগামীতে সেটি আরও সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেন, আশার কথা হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও সেখান থেকে খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেল রপ্তানি শুরু হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকার সকল ক্ষেত্রে কৃচ্ছতা সাধন করছে। ভারত সফর সফল হওয়ায় একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
একনেক অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-‘বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশাল (চরকাউয়া) হতে ভোলা (ইলিশা ফেরীঘাট) হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত)’ এর মোট প্রকল্প ব্যয় ৫০২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ্-আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের (১ম সংশোধিত)’ মোট ব্যয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা । ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড এ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি’ এর ব্যয় ২১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।‘মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ এর ৯৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)-শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ ৪র্থ বার বৃদ্ধি’ এর মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।