আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দল জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
মঙ্গলবার গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, ১৪ দলের ঐক্য বজায় থাকবে। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে ১৪ দলের যে ভূমিকা সেটিও অব্যাহত থাকবে।
নির্বাচনে আসন বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ এ নেতা বলেন, এখনই আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে না। এ জন্য আরও আলোচনা প্রয়োজন। অনেক বিষয়ের ওপর আসন বণ্টন নির্ভর করে। এ আলোচনা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরে হবে।
বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তখন কি জোটবদ্ধ নির্বাচন হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা তারা বলছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কী করবে এটা দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
বিএনপির দেশব্যাপী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪ দল মাঠে নামবে জানিয়ে আমু বলেন, বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪ দল মাঠে নামবে। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগকে যে নির্দেশ দেবেন সে অনুযায়ী ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ শুরু করা হবে।
আমির হোসেন আমু বলেন, করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম ও ভূমিকার প্রশংসা করেছে ১৪ দল। সারা বিশ্বে করোনার এ সময়ে দেশের মানুষের টিকা দেয়া, করোনা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। শ্রমিকসহ সকল শ্রেণির মানুষকে যেভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এ জন্য তার প্রশংসা করা হয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য, বর্তমান পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য সবই আলোচনা হয়েছে। খুবই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। বহুদিন পরে একটা ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি সরকারের সঙ্গে ১৪ দলের সম্পর্কে যে প্রশ্নটা আছে, সেটাও আপনার নির্মূল করতে হবে। কারণ সব ব্যাপারে আমরা একমত নই। সব বিষয় আমরা মেনে নিয়েছি ব্যাপারটা এ রকম নয়। সুতরাং যেখানে যেটা আছে, সেখানে কোনো ব্যত্যয় থাকলে, বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বিএনপি নির্বাচনে না এলে কি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ওই বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, সেটা আমরা জানি না।
আপনি যে বিভিন্ন সময় জনগণের ভোটের নিশ্চয়তা দাবি করেছিলেন। সেই বিষয়ে কি আজকে আলোচনা করেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একেবারে স্পষ্টভাবে বলেছি গত ইউপি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্নগুলো এসেছে, জনগণের ভোটদানের অধিকারের যে প্রশ্নটি এসেছে, এসব ব্যাপারটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
জোট নেত্রী কী বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, নেত্রী কি সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন?
ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক নীতি অবলম্বনকে সমর্থন করেছেন বলে জানিয়েছেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি এটা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন না, সামগ্রিক।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারি দলের কাছে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনাটা হয়েছে ১৪ দলীয় জোট প্রসঙ্গে। আমরা মূলত কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। সেটি ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো রাষ্ট্রের চিরশত্রু, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী এবং সন্ত্রাসী শক্তি রাষ্ট্রের মূলভিত্তিতে হামলা ও আঘাত করছে। তাই আমরা মনে করি এখনো ১৪ দল রাখার প্রয়োজন রয়েছে। তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম যেন বৃদ্ধি না করা হয়, সেই বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে। দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে বলেছেন নিয়ন্ত্রণের রাখার সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিএনপি নির্বাচনে না আসলে কি জোট থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোট থাকবে। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে। এটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপি সম্পর্কে বলেছেন, তারা একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ। তাই তিনি চান আওয়ামী লীগের বিকল্প একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হোক। সেটি ১৪ দলভুক্ত, আমাদের রাজনৈতিক মূল ভিত্তি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীনতার পক্ষের চেতনা। সুতরাং সেই শক্তির থেকে আরেকটি বিকল্প শক্তির উত্থান হোক সেটাই ওনার প্রত্যাশা।
এদিকে আমন্ত্রণ পেলেও বৈঠকে অংশ নেয়নি জোটের শরিক বাংলাদেশ জাসদের একাংশ। ১৪ দলীয় জোট বর্তমানে কার্যকর নয় দাবি করে গতকাল জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের ডেকেছেন শুনেছি। আমাকেও ফোন করা হয়েছিল। আমরা তো ১৪ দল কন্টিনিউ করার পক্ষে না। এটা এখন অতীত। জোটে বাকি যারা আছেন, তারা হয়তো কৌশলে কিংবা নগ্নভাবে চাটুকারিতে আছেন। আমরা যাচ্ছি না। ১৪ দলীয় জোট এখন অতীত। বর্তমানে এটার কোনো ফাংশন নেই। দিবস উদযাপন করা তো ফাংশন না। যে কারণে এই জোট করা হয়েছে, সেটা এখন বাস্তবায়ন হয় না। সরকারে থেকে কে কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করবে সেটাই চলছে।