জয় দিয়েই কাতার বিশ্বকাপ শুরু করলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ‘জি’ গ্রুপে নিজেদের ১ম ম্যাচে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে নেইমাররা। দলের হয়ে গোল দু’টি করেন করেন রিচার্লিসন।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত ১টায় লুসাইল স্টেডিয়ামে শুরু হয় ম্যাচটি।
ম্যাচের শুরু থেকে সার্বিয়ার রক্ষণে হানা দেয় ব্রাজিল। ৪র্থ মিনিটে রাফিনহা সার্বিয়ার ডিফেন্ডার স্ত্রাহিনিয়া পাভলোভিচকে কাটিয়ে নিচু ক্রস নিয়েছিলেন। কিন্তু কাছের পোস্ট থেকে বল ক্লিয়ার করা হয়। ৭ম মিনিটে আক্রমণে ওঠে আসা নেইমারকে ঠেকাতে গিয়ে ফাউল করেন পাভলোভিচ। সঙ্গে সঙ্গে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। ৯ম মিনিটে ক্যাসেমিরোর দারুণ পাসে বক্সের ভেতরে বল পেয়ে যান নেইমার। নিয়ন্ত্রণে নিলেও সার্বিয়ান ডিফেন্ডাররা ঘিরে ধরেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে। ফলে শট নিতে পারেননি তিনি।
১৩ মিনিটেই প্রথম কর্নার আদায় করে নেয় ব্রাজিল। নেইমার শট নিলে গোলরক্ষক মিলিনকোভিক সাভিচ পাঞ্চ করে বল বাইরে পাঠিয়ে দলকে রক্ষা করেন। নেইমারের পরের কর্নার কিকে রাফিনহা লাফিয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তার আগেই বল গোলরক্ষকের হাতে। ২১ মিনিটের সময় পরপর দুই মুহূর্তে অসাধারণ দু’টি শট নিয়েছিলে নেইমার এবং ক্যাসেমিরো। নেইমারের শট ফিরে আসে এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে। ক্যাসেমিরোর শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক সাভিচ।
২৬তম মিনিটে সার্বিয়া গোলের দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলো। ব্রাজিলিয়ানদের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন তাদিচ। মিত্রোভিচকে ক্রস করেন তিনি। কিন্তু ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন লাফ দিয়ে উঠে সেই বল নিজের নিয়ন্ত্রনে নেন। ২৮ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলো ব্রাজিল। থিয়াগো সিলভা বল পাস দিয়েছিলেন বক্সের মধ্যে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র একা ছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক সাভিচ ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ক্লিয়ার করেন।
৩৫তম মিনিটে রাফিনহা দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাম পায়ের দুর্বল শট গোলরক্ষকের হাতে চলে যায়। ৪১তম মিনিটে গোল্ডেন চান্স পেয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কিন্তু সার্বিয়ান ডিফেন্ডারদের চার্জের কারণে ভিনিসিয়ুস ভালো শট নিতে পারেননি। বল চলে যায় বাইরে। প্রথমার্ধে গোলশূন্যভাবেই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল এবং সার্বিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে ৪৬তম মিনিটেই গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন বার্সা তারকা রাফিনহা। সার্বিয়ার এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন তিনি। সামনে ছিলো শুধু গোলরক্ষক। বলটা আলতো টোকা দিলে হয়ে যেতো। কিন্তু তিনি মেরে দেন গোলরক্ষকের শরীরে।
৪৯তম মিনিটে বক্সের সামনে ফ্রি-কিক আদায় করে নেন নেইমার। শট নেন তিনি। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সার্ব ডিফেন্ডাররা। কর্নার কিক করেন নেইমার। থিয়াগো সিলভার দুর্দান্ত এক হেড, ঘাড়ে বল লাগিয়ে দলকে রক্ষা করেন সার্ব ডিফেন্ডার। ৫৫ মিনিটে বাম পাশ থেকে বক্সের মধ্যে ক্রস করেন ভিনিসিয়ুস। গোল লক্ষ্যে দুর্দান্ত এক শট নেন নেইমার। কিন্তু দুর্ভাগ্য বলটি চলে যায় সাইড বারের অনেক বাইরে দিয়ে।
৫৮ মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক ছিল সার্বিয়ার। কর্নারের বিনিময়ে বলকে রক্ষা করেন অ্যালেক্স সান্দ্রো। ৬০ মিনিটে নিশ্চিত গোলবঞ্চিত হলো ব্রাজিল। বক্সের বাইরে প্রায় ৩০ গজ দুর থেকে বাঁ-পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন আলেক্স সান্দ্রো। কিন্তু বল বামপাশের সাইডবারে লেগে ফিরে আসে। ৬২ মিনিটে গোল করে ব্রাজিল। অনেক কষ্টের পর আসে গোলটি। নেইমার বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সের মধ্যে। ডিফন্ডোরের সামনে বাধা পেলে সুযোগ বুঝে গোলে শট নেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন বলটি। ফিরতি বলটিতেই আলতো টোকায় সার্বিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন রিচার্লিসন।
৬৭ মিনিটে আবারো সুযোগ পেয়েছিলো ব্রাজিল। কাউন্টার অ্যাটাকে মাঝ মাঠ থেকে রাফিনহা বল নিয়ে এগিয়ে আসে সার্বিয়ার বক্সের সামনে। ডিফেন্ডার বাধা দিলে সেই বল নিয়ে কয়েক পা এগিয়ে এসে শট নেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু পোস্ট লক্ষ্যে শটটি রাখতে পারেননি তিনি।
৭৩তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল। রিচার্লিসনের এই গোলটি চোখে লেগে থাকার মত। বক্সের বাম প্রান্ত থেকে ডান-পায়ের টোকায় বক্সের মাঝে দাঁড়ানো রিচার্লিসনকে বলটি দেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। রিচার্লিসন প্রথমে বলটি নিয়ন্ত্রনে নেন। হালকা উপরে উঠে যাওয়া বলটিকে একটু সময় নিয়ে অসাধারণ এক বাইসাইকেল কিকে সার্বিয়ার জালে বল জড়ান তিনি।
৭৭ মিনিটে রিচার্লিসনকে তুলে গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে মাঠে নামানো হয়। নেইমার হালকা আহত হলে তাকে তুলে নিয়ে মাঠে নামানো অ্যান্তোনিকে। তার আগেই ভিনিসিয়ুসকে তুলে মাঠে নামানো হয় রদ্রিগোকে।
৮১ মিনিটে রাফিনহার কাছ থেকে বল পেয়ে ক্যাসেমিরো শট নেন। কিন্তু বল ডান প্রান্তে পোস্টের কোনায় লেগে ফিরে আসে। ৮২তম মিনিটে রদ্রিগো দুর্দান্ত এক শট নেন। কিন্তু গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন সেটি। ৮৩ তম মিনিটে বাম পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন লুকাস পাকুয়েতার পরিবর্তে মাঠে নামা ফ্রেড। কিন্তু গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি রক্ষা করেন।
বাকিটা সময় ম্যাচে ফেরা তো দূরের কথা নিজেদের দুর্গ সামলাতেই মহাব্যস্ত থাকতে হয় সার্বিয়াকে।