লোকমান আনছারী রাউজান প্রতিনিধি:
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সিপাহীসালার বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্য সেনের প্রয়াণ দিবসে তার ম্যুরালে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছন তার জন্মভূমি রাউজানের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। ১২ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সকালে মাস্টার দা সূর্যসেনের জন্মভূমি রাউজানের মুন্সিরঘাটাস্থ সূর্য সেন চত্বরে তার স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মাস্টার দার ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, রাউজান প্রেসক্লাব, মাস্টার দা সূর্য সেন স্মৃতি পাঠাগারসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, তসলিম উদ্দিন, আবদুল লতিফ, তপন দে, সাবের হোসেন, জিয়াউলক হক চৌধুরী রোকন, আবু ছালেক, মো. এরশাদ, নাছির উদ্দিন প্রমূখ। উপমহাদেশের এ কৃতী পুরুষকে চির স্মরণীয় করে রাখতে রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী তার নামে স্কুল, তোরণ, হাসপাতালসহ উপজেলা সদরে ম্যুরাল স্থাপন করেছেন। আলোচনা সভায় বক্তরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রামের টাইগারপাস এলাকাকে ‘মাস্টার দা সূর্য সেন চত্বর ঘোষণা করা হোক’। কয়েক বছর আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি রাউজানে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করে গেছেন। বক্তারা বলেন, পরাধীনতা থেকে দেশকে মুক্ত ও স্বাধীন করার সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী, দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মাস্টার দা সূর্যসেন। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে স্বাধীনতাকামী মাস্টার দা’র জন্মদিন উদযাপন করছি। ইতিহাস টেনে তারা বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও কলকাতার বহরমপুর কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর বিপ্লবী দলের সঙ্গে মাস্টার দা সূর্যসেনের যোগাযোগ বাড়ে। স্নাতক পাস করে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে উমাতারা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন সূর্যসেন। নিজের বিপ্লবী দলের জন্য অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ঘুরেছেন বাংলাদেশ ও কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চল। সূর্যসেন ব্রিটিশদের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। ব্রিটিশরা তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। ১৯৩৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সূর্যসেন ইংরেজ সেনাদের হাতে গ্রেপ্তর হয়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগারে এই বিপ্লবীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দেশের জন্য মাস্টারদা সূর্যসেনের এই আত্মত্যাগ যুগ যুগ ধরে বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী প্রথম মাস্টার দা সূর্যসেনের স্মৃতি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেন। উদ্ধার করেন বেহাত হয়ে যাওয়া নোয়াপাড়ার বসতভিটে। বর্তমানে রাউজানে গড়ে উঠেছে মাস্টার দা স্মৃতি কমপ্লেক্স, সরকারি স্কুল। স্থাপন করা হয়েছে আবক্ষ ভস্কর্য, স্মৃতি পাঠাগার ও স্মৃতি তোরণ। এ ছাড়া একটি সড়কের নামকরণও করা হয়েছে তার নামে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি রাউজানের মুন্সিরঘাটাস্থ মাস্টার দা সূর্যসেন স্মৃতি পাঠাগার কমপ্লেক্স, আবক্ষ ভাস্কর্যর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জি।