যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ রেমিট্যান্স আসার প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। বিষয়টিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করে পাচারের অর্থ রেমিট্যান্স হয়ে দেশে ফিরছে কি না, এ প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি।
শনিবার (২৭ মে) সিপিডির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২-২৩: তৃতীয় অন্তর্বর্তীমূলক পর্যালোচনা’ জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া অর্থ রেমিটেন্স আকারে আসছে। তারা রেমিটেন্সে দেওয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও নিচ্ছে। এই প্রণোদনা নিতে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স আনছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক রেমিট্যান্সের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এ যাবৎকাল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স বেশি এলেও বর্তমানে বেশি আসছে আমেরিকা থেকে। সৌদি আরব থেকে গত অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের জুলাই-এপ্রিলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে।
ফাহমিদা খাতুন বলে, যুক্তরাষ্ট্রে যারা যায় তাদের বেশিভাগই হোয়াইট কালার জব করে। অনেকেই ঘরবাড়ি ও জমিজমা বিক্রি করে দেশ থেকে টাকা নিয়ে চলে যায়। অনেক শিক্ষার্থীও সেদেশে আছে। তারা তো আর টাকা পাঠাতে পারে না। তাহলে বিপুল এ রেমিট্যান্স আসছে কোথা থেকে!
এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখান থেকে টাকাটা পাচার হয়েছে সেটা আবার রেমিট্যান্স হয়ে দেশে ফেরত আসছে। রেমিট্যান্সের ওপর যে আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ বা সাবসিডি দেওয়া হচ্ছে সেটার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে আরও গভীরে গিয়ে বিষয়টির অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত জানান তিনি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক সাময়িকভাবে কমানো হলে তারা স্বস্তি পাবে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং করাও প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। দরিদ্রদের প্রত্যক্ষ সহায়তার আওতা বাড়ানো দরকার। সঠিক ব্যক্তিরা পাচ্ছে কিনা সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রপ্তানির বৃদ্ধির হার ইতিবাচক না। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হচ্ছে।
সভায় সিপিডি ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার নতুন ভিসা নীতিকে সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমেরিকাই একমাত্র বাজার যেখানে শুল্ক দিয়েও প্রতিযোগিতায় সক্ষম। ২০২৬ কিংবা ২০২৯ এর পরে ইউরোপ, কানাডা বা ভারতের বাজারে শূন্য শুল্কের সুবিধাটা থাকছে না। কিন্তু মার্কিন বাজারে শুল্ক দিয়ে ঢুকেও প্রতিযোগিতায় সক্ষম। এই বাজারটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য এই বিষয়টি সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।