জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু বলেছেন, বাঙালি জাতি আন্দোলন করে কখনো খালি হাতে ফেরেনি। তামাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও তারা খালি হাতে ফিরবেনা।
তিনি বলেন, তামাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না; পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে তামাকের বিরুদ্ধে রাজনীতিবীদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যানুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে।
ডেপুটি স্পিকার আজ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের চিত্রা হলে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বক্তৃতায় একথা বলেন।
সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি, সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, সংসদ সদস্য শিরীন আখতার ও সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা বক্তব্য রাখেন ।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে মাদকমুক্ত দেশ প্রসঙ্গে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তামাকমুক্ত করতে পারবো। জাতির ভেতর তামাক-বিরোধী ঝড় উঠেছে, এখন শুধু এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, আমরা ২৩ বছর সময় নিয়েছি মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে, বিজয় লাভ করেছি ৯ মাসে। কাজেই ধৈর্য্য ধারণ করে সঠিক কাজটি করে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু আইন করে দেশকে মাদকমুক্ত করা যাবে না, পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা ও নৈতিকতারও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তামাক-বিরোধী আইন পাশ হওয়া সময়ের ব্যাপার।
শামসুল হক টুকু বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা আমরা ব্যয় করেছি, অথচ, তামাকের চেয়ে ১৬গুণ বেশি প্রাণঘাতী ব্যাধি নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা অনেকেই উদাসীন। এটি রোধে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
তামাক-বিরোধী অবস্থানে নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি একবার দলীয় কমিটি গঠনে ডোপ টেস্ট করিয়ে নেগেটিভ রিপোর্টধারীদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছি। এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্য করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে কাজ করেছি, বর্তমানে বিধানটি চালু রয়েছে। এভাবে যার যেখানে মাদক-বিরোধী কাজ করার সুযোগ আছে সবারই তা করা উচিৎ।
সাবের হোসেন চৌধুরী, এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত-বাংলাদেশ ঘোষণার ২৫ বছর সময়সীমার ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন ‘রোডম্যাপ’ তৈরি হয়নি। উপরন্তু তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার এবং সরকারের প্রতিনিধি রয়েছে যা দেশকে তামাকমুক্ত করতে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে এবং নীতি-নির্ধারনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, তবে আমাদের সঙ্গে ডেপুটি স্পীকার থাকায় সংসদীয় কার্যক্রমে আমরা আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারব। তামাকের পেছনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে লড়তে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
সিমিন হোসেন রিমি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এগুলো দূর করতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল আরও অনেক বাড়াতে হবে। তামাকের বিকল্প হিসেবে খেলাধুলার প্রসার ঘটাতে হবে। আমাদের দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোকে তামাক-বিরোধী কার্যক্রম গ্রহণসহ ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে।
ড. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান, অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং মতিউর রহমান তালুকদার।
এছাড়াও সভায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।