টানা ৮১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তাকে চলাফেরা করতে হচ্ছে।ফিরোজার দোতলায় নিজকক্ষে শুয়ে-বসেই গত তিনদিন ধরে তিনি সময় কাটাচ্ছেন।
বেগম খালেদা জিয়া বাসায় ফেরার আগেই বাসার সবার কোভিড টেস্ট করানো হয়। করোনার ঝুঁকির কারণে নেতাকর্মীদের আপাতত সাক্ষাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। দিনে ও রাতে দুইজন নার্স দুই শিফটে ডিউটি করছেন।
চিকিৎসকরা বলেছেন, খালেদা জিয়া পুরোপুরি সুস্থ সেটা বলা যাবে না। তবে, আগের চেয়ে তিনি ভালো আছেন। এখন করোনা ঝুঁকির কারণে তাকে হাসপাতালের পরিবর্তে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়াটা সেফ মনে করছি।
খালেদা জিয়ার স্বজনরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসায়অনেকটা স্বস্তিবোধ করছেন তিনি। বাসার পারিবারিক পরিবেশ তার কাছে ভালো লাগছে। অনেকটা সুস্থ আছেন তিনি।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বাসায় ফেরার পরদিন বোন সেলিমা ইসলাম গুলশানের ফিরোজায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সময় কাটান। খালেদা জিয়ার জন্য নিয়ে যাওযা তার পছন্দের খাবার তিনি আগ্রহের সঙ্গেই খেয়েছেন। একই সঙ্গে বোনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেন। এরপর লন্ডনে থাকা ছেলে, ছেলের বউ, নাতনিদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে সময় কাটান। সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা গরম পানি পান করেন। এরপর হুইল চেয়ারে করে কিছুটা সময় বারান্দায় রোদ পোহান। এছাড়া টেলিভিশন দেখে ও বই পড়ে সময় কাটান।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. আল মামুনসহ দুইজন চিকিৎসক বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাসায় গিয়ে তাকে দেখে এসেছেন। নতুন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়নি। এ দিনও সেলিমা ইসলাম খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। পরদিন বৃহস্পতিবার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমাও গিয়েছিলেন তাকে দেখতে।
বর্তমানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন গৃহকর্মী ফাতেমা ও রুপা। তারাই সার্বক্ষণিক তার দেখাশোনা করছেন। খাবারের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছেন। প্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে স্যুপ, ছোট মাছ, মুরগির মাংস ও সবজি। করোনা পরিস্থিতি ও শারীরিক ঝুঁকি বিবেচনায় রেখেই এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে চিকিৎসা চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। করোনার কারণে নেতাকর্মীদের সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে জানানো হবে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে সুরক্ষার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বাইরের কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। নেতাকর্মীদেরও ভিড় করতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ হওয়ার চার দিন পর এভার কেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করা হয়। তবে, ভর্তি করা হয়নি। পরে ২৭ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯ জুন তিনি বাসায় ফেরেন। জ্বর আসার পর গত ১২ অক্টোবর আবার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় তার হাতে (লাম্ব) ছোট টিউমার ধরা পড়ে। সেটি অপারেশন করা হয়। ৭ নভেম্বর তিনি বাসায় ফেরেন।
দ্বিতীয় দফায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর বেশি দিন থাকা হয়নি। ৬ দিনের মাথায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বিকেলে আবার তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় পরের দিন ভোরে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তার। দীর্ঘ ৮০ দিন সেখানে থাকার পর ৮১তম দিনে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত আটটার দিকে তাকে বাসায় নেওয়া হয়।