শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে বইমেলা। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করেন কবি শামীম আজাদ।
এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা-২০২৪। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এ ছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আর অমর একুশে বক্তৃতা দেবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
এদিকে প্রতিবছরের মতো একুশের চেতনাকে ধারণ করে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে শুরু হয় অমর একুশে বইমেলা। মেলার দুয়ার খোলার পর থেকেই মেলায় বইপ্রেমী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কালো পাড়ের সাদা শাড়িতে নারীরা আর সাদা পাঞ্জাবিতে পুরুষ দল বেঁধে এসেছে মেলায়। সঙ্গে এসেছে শিশুদের দল। তাদের কলরব আর মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে ছোটাছুটিতে বইমেলা পেয়েছে উৎসবের ছোঁয়া।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনেকেই ফুল দিয়ে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বইমেলায় আসেন। এবারের মেলার প্যাভিলিয়ন ও স্টল নির্মাণে একুশের চেতনা ও গ্রামীণ বিষয়বস্তুকে বরাবরের মতো এবারও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে একুশের সকালের বইমেলা যেন এক টুকরো শহীদ স্মৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে। তবে, যেই ভাষা শহীদদের স্মরণে এই মেলা তাদের নিয়ে এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মেলায় খুবই কম।
বাংলা একাডেমি থেকে জানা গেছে, এবারের মেলায় আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রকাশিত নতুন বই সুজন বড়ুয়ার ‘আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এছাড়া এম আবদুল আলীমের গবেষণাধর্মী বই ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন জেলাভিত্তিক ইতিহাস’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা’। এছাড়া, এম আবদুল আলীমের ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে রফিকুল ইসলাম’ এবং হাবীবুল্লা ফাহাদের ‘দুই ভাষা সংগ্রামীর মুখোমুখি- আহমদ রফিক ও রফিকুল ইসলাম’। পাশাপাশি বশীর আল হেলালের ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’, মাযহারুল ইসলামের ‘ভাষা আন্দোলন ও শেখ মুজিব’ নামে আরও দুটি বই এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া, আরও কয়েকটি প্রকাশনীতে ভাষা আন্দোলনের বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো আহমদ রফিকের ‘একুশ থেকে একাত্তর’ (অনিন্দ্য) ও ‘ফিরে দেখা অমর একুশ ও অন্যান্য ভাবনা’ (সময়), গোলাম কুদ্দুছের ‘ভাষার লড়াই, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন’ (নালন্দা), ‘বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন’ (অন্যপ্রকাশ), ‘ভাষা-আন্দোলনে তাজউদ্দীন আহমদ’ (ঝুমঝুমি প্রকাশনী), ‘ভাষা আন্দোলনের জানা-অজানা ইতিহাস’ (ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ), আহমেদ রশিদের ‘ভাষা শহীদদের কথা’ (ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ), শাহনেওয়াজ চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু, একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ (শোভা প্রকাশ), আখতার হোসেন মল্লিকের ‘ভাষা সংগ্রাম ও বইমেলা’ (জলছবি) ইত্যাদি।
প্রকাশকরা বলছেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও পাণ্ডুলিপির সংকটের কারণে নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা কম থাকে। আবার যারা লেখেন তারাও অনেকে ভাষা আন্দোলনের একপেশে ইতিহাস লেখেন। এসব কারণে অনেক সময় ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস চাপা পড়ে যায়। তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দিতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, ভাষা আন্দোলনের মতো ইস্যুতে বেসরকারি প্রকাশনাগুলোর বেশি বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।