দিলীপ কুমার দাস নিজস্ব প্রতিবেদক।
এক সময় আবর্জনা-ময়লা বা অন্ধকারের শহর হিসেবে মানুষ ময়মনসিংহকেই জানতো। শহরের যেখানেই দিনের বেলা মানুষ চলাফেরা করতো ময়লার ভাগাড়ের সামনে দিয়ে নাক চেপে পথ চলতে হতো। আর রাতের বেলায় ৬০ পাওয়ারের স্ট্রিট লাইটের আলোয় দেখা যেতনা ময়লার ভাগাড় বা কোন সড়কের ছোট-বড় গর্ত। প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার পথচারীরা । ১৫ বছর আগের চিত্র যারা দেখেছেন বা শুনেছেন তাদের দৃষ্টিতে ময়মনসিংহের পরিবর্তনটা পরিলক্ষিত হবে বিগত সময়ে নগরীর দৃশ্যপট বদলে দিয়েছেন সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু।
তার দক্ষ দিকনির্দেশনায় ময়মনসিংহ সিটিকে এখন মানুষ অন্যরূপে চিনে। নগরীর ময়লার ভাগাড় আর নেই, নেই সড়ক জুড়ে অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি।
নগরীর পাট গুদাম এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী দিপক বলেন, আগে ময়লাকান্দা দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলে আবর্জনার দুর্গন্ধে শিশু থেকে শুরু করে সকল যাত্রীরা বমি করে দিত। অনেকে অসুস্থ হয়ে যেতো, কিন্তু এখন আর সেই দুর্গন্ধ নেই বললেই চলে।
মসিক সূত্রে জানা গেছে, বিলুপ্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার জনবল নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মে.টন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন । ৬৪২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে দিনরাত্রি চলছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। যত্রতত্র আবর্জনা জমানো রোধে নগরীর ৫০ টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। গ্রামাউস নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে প্রতিদিন ১০ মেট্রিকটন গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন করা হচ্ছে এবং মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ১৪শ টন সার তৈরি করা হচ্ছে।
এছাড়া, বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহে ক্লিনসিটি নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রিজম ফাউন্ডেশন লিমিটেডের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এছাড়াও, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে মসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাব্বত আলী বলেন, আমাদের জনবল সংকট থাকলেও আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে। পাশাপাশি আমাদের নগরবাসীকেও আরও সচেতন হতে হবে।
মসিক সূত্রে আরও জানা গেছে, নগরী
আলোকিতকরণেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখাতে সক্ষম হয়েছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। বর্ধিত ১২ টি ওয়ার্ড সহ মোট ৩৩ টি ওয়ার্ডে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৭১ কিলোমিটার সড়কে ৬ হাজার ৮৯০ টি জিআই পোলসহ আধুনিক এলইডি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি, ৩৫৮ টি সোলার প্যানেলসহ সড়কবাতি এবং নগরীর জয়নুল আবেদীন পার্কে ২৭০ টি গার্ডেন লাইট স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। এর ফলে যেমন নগরীর অলিগলি থেকে বড় বড় সড়ক আলোকিত হয়েছে, ঠিক তেমনি নিশ্চিত হয়েছে নগরবাসীর নিরাপত্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসিন্দা জানান আমি প্রতিদিনই অফিসের কাজ শেষ করে রাত করে বাসায় ফিরি, আগে এই এলাকায় মাদকসেবী-ছিনতাইকারীদের ভয়ে কেউ আসতো না, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা ছিল রাস্তাগুলো, কিন্তু এখন লাইটের কারণে দিনের আলোর মতো সব পরিষ্কার দেখা যায়, চুরি-ছিনতাইয়ের কোন ভয় নেই।
নানা বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে থেকেও নগরবাসীকে সর্বোচ্চটা চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করেছেন মন্তব্য করে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন সদ্য সাবেক মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা আর নগরের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা তৈরি করে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। সিটির উন্নয়নে ১৫৭৫ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৩০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্জ্য ব্যাস্থাপনার মাধ্যমে সুষ্ঠ পরিবেশ তৈরি করা এবং সড়ক বাতি স্থাপনের মাধ্যমে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
এছাড়াও বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ, শিশু পার্ক নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরকে আধুনিক এবং জনবান্ধব করে তুলতে নগরবাসী আবারও আমাকে সুযোগ দেবে বলে আমি আশাবাদী।