আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) : রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন মঙ্গলবার। এবারো এই ইউনিয়নের কমিটির গুরুত্বপূর্ন পদগুলোতে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
এর আগে হরিয়ান ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটিতে পদ পেয়েছেন বিএনপির নেতারা। এবার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের চারটিতে বিএনপির সক্রিয় নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বিএনপির লোকজন ওয়ার্ড কমিটিতে স্থান পাওয়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনার ঝড়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের ত্যাগী এবং পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এব্যাপারে বারবার অভিযোগ করেও লাভ হয়নি বলে জানান তারা।
একটি সূত্রে জানা গেছে, হরিয়ান ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি লিলবর বিএনপি করতো এবং তার স্বপরিবারে এখনো বিএনপির সঙ্গে জড়িত। ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. ইসলাম আলী। তিনি সর্বপ্রথম হরিয়ান বাজারে জিয়াউর রহমানের ছবি আর্ট করেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর এক সময়ের সক্রিয় বিএনপির সদস্য।
জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও পবা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, লিলবর, ইব্রাহিম, ইসলামসহ অনেকে ছাত্রদল ও বিএনপি করতো। প্রতিটি দলের মধ্যে কিছু ধূর্ত ও সুবিধাবাদি নেতা ও লোক থাকে। তাদের মধ্যে এরা। আওয়ামী লীগের মত একটি দল কেন নেতা তৈরীতে অন্য দল থেকে লোকজনকে হায়ার করতে হবে।
এব্যাপারে ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর ফারুক ভাদু ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ওমর আলী ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রুস্তোম আলীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলেন, বর্তমান কমিটির কিছু নেতা আগে
বিএনপি-জামায়াতের কমিটিতে ছিলেন, গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট, রাজাকারপুত্র, বিএনপির বর্তমান বিভিন্ন কমিটির দায়িত্বশীল নেতাও আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। আর বাদ পড়েছেন দলের প্রবীণ ও ত্যাগী কর্মীরা। এই কমিটি গঠনের পর থেকেই দলীয় অসন্তোষ বিরাজ করে।
তারা আরো বলেন, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জেবর আলী পদ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিএনপির নেতাদের স্থান দিয়েছেন। গঠনতন্ত্র অমান্য করে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বিএনপির সক্রিয় নেতাদের নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়ার প্রতিবাদও জানান স্থানিয় ত্যাগী আ.লীগ নেতারা। তারা বলেন, এই জেবর আলীই নৌকাতে ভোট দেন না। এরআগে জাতীয় নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী মেরাজ উদ্দিন মোল্লার পক্ষে কাজ করেন। পাশাপাশি তার নিজেস্ব লোকদের নৌকায় ভোট দিতে বাধা দেন।
এছাড়াও ২০১৪ সালে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক পান হাসান আহমেদ জুয়েল। সেই নির্বাচনে জেবর আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। অবশ্য সীমানা জটিলতায় আজ পর্যন্ত হরিয়ান ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত আছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা বলছেন, এতে দলের শৃঙ্খলা নষ্টের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পড়বে।
এদিকে বিকালে হরিয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, সভাপতি পদে প্রার্থী হবেন ইউনিয়ন সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেবর আলী ও ত্যাগি নেতা আবুল হোসেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হবেন হানিফ মো. পলাশ, মেহের আলী, ইব্রাহিম হোসেন ও মাসুম মোল্লা। এরমধ্যে তৃণমুলের সমর্থনে সাধারণ সম্পাদক পদে হানিফ মো. পলাশ এগিয়ে আছেন। তৃণমুল ভোটাররা বলছেন হানিফ মো. পলাশ ধার করা নেতা নয়। তার পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত। তৃণমুলের মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ভাল। এমন নেতাই আমাদের কাম্য।