রাজশাহী প্রতিনিধি:-রাজশাহীতে এবার কমেছে আমের ফলন। বৃষ্টি কম ও খরা বেশী হওয়ায় আকার ছোট হয়ে আমের ফলন কমেছে বলেছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। তবে এবার দামের দিক থেকে গেল কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ফলে আমের ফলন কম হলেও দামে খুশি চাষিরা।
রাজশাহী অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহতর আমের হাট পুঠিয়ার বানেশ্বরে। এই হাটে বর্তমানে গুটি, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ, রাণীপছন্দ আম বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে ন্যাংড়া।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকেই এবার হাট-বাজারগুলোতে আমের সরবরাহ কম। প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতে রাজশাহীর হাট-বাজার ও পথ-ঘাট আমে ভরপুর হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার আম ময় রাজশাহীর সেই চিরচেনা দৃশ্যপট নেই। আমের হাটগুলো এখনো অনেকটাই ফাঁকা।
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে এবারও আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয় জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী গত ১৩ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম পাড়া শুরু হয়। এরপর গত ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে লক্ষ্মণভোগ ও রাণীপছন্দ এবং ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর পাড়া শুরু হয়েছে গত ২৮ মে থেকে। আর ল্যাংড়া আম নামবে ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি আম ১৫ জুন, আশ্বিনা ও বারী আম-৪ ১০ জুলাই, গৌড়মতি ১৫ জুলাই এবং সবার শেষে নতুন জাতের ইলামতি আম পাড়া যাবে ২০ আগস্ট থেকে।
বানেশ্বর হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, গেল বছর যে গুটি আম ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা মন বিক্রি হয়েছে এবার সেই আম ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। গোপালভোগ আম গত বছর শুরুতে ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা মণ ছিল সেই আম এবার বেচা কেনা হয়েছে ২৩০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা মণ দরে।
আর ক্ষিরপসাপাত এবার বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণ। অথচ গত বছর মৌসুমের শুরুতে এ আম বিক্রি হয়েছিল ২০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ। এছাড়া হাটে প্রতিমণ লক্ষ্মণভোগ আম ৯০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন, গেল বছরও আমের বাম্পার ফলন হয়েছিল রাজশাহীতে। তবে করোনার কারণে দাম পায়নি কৃষক। এবার আমের ফলন কম হলেও দাম বেশী হওয়ায় সেটি পুশিয়ে যাচ্ছে। তবে ফলন কম হওয়ায় এবার হাটে আমের সরবরাহ কম রয়েছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে রাজশাহীতে এবার আমের ফলন কম হয়েছে। তবে এই কম ফলনেও রাজশাহীসহ গোটা দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব। আর এবার দাম বেশি হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকরাও একটু লাভবান হবেন। গেল দুই বছর করোনার কারণে আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তাদের সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, গেল বছর ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৭ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে এই উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এবার রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে থাকা বাগান থেকে ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।