ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি : ‘শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হলে দেশ বাঁচবে, জাতি বাঁচবে, আপনারাও বাঁচবেন। নৌকা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার মার্কা। নৌকাই স্বাধীনতার প্রতীক। ২০১৮ সালের আগেই আমার নির্বাচনী এলাকা বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালী শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী জনসভায় আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর খেলার মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যখন ষড়যন্ত্র হয় তখন আমরা বসে থাকতে পারিনা। এজন্য আমাকে সারাদেশে সময় দিতে হয়েছে। আমার ইচ্ছা থাকলেও আপনাদের মাঝে সব সময় আসতে পারিনি। তবে আমি কারো উপকার করতে না পারলেও ক্ষতি করিনি। আগামী ৭ তারিখে প্রমাণ হবে মানুষ কালো টাকায় ভোট দেয়না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে আব্দুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি ইঙ্গিত করে আব্দুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে মিথ্যাচার আমি করি না। আপনারা আপনাদের মহামূল্যবান ভোট টাকার কাছে বিক্রি করবেন না। ‘কার সাথে নির্বাচনে আসলাম! মাঝে মাঝে মনে হয় নদীতে কলসীর গলায় রশি দিয়ে মরে যাই।’ তিনি বলেন, তোমার বয়স ৪৬ বছর। আর আমার রাজনীতির বয়সই ৫৭ বছর। আমি যেদিন মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেদিন তুমি মায়ের পেটে পর্যন্ত আসোনি। তুমি আবার আমাকে নিয়ে বাজে বক্তব্য দিয়ে বেড়াও।
উপজেলা সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীম সুজা ও যুগ্ম সম্পাদক কামাল আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় নির্বাচনী জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন,’স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য আপনারা নৌকায় ভোট দিবেন। আব্দুর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আপনাদের কাছে তাঁর জন্য ভোট প্রার্থনা করতে এসেছি।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের সাবেক ডিএমপি কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাকি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা মিথ্যাচার, এটা প্রপাকান্ডা। মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকা, জাতির পিতার প্রতীক নৌকা। গতবারের মতো বিনাভোটে যাতে কেউ নির্বাচিত না হয় সেজন্য ডামি প্রার্থী রাখার কথা বলা হয়েছিলো। নৌকার প্রার্থীই একমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ১৯৭৫ সালের পরে আওয়ামী লীগ এ আসনে পরাজিত হয়নি।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার বলেন, এটা এমপি বানানোর নির্বাচন, এটা মন্ত্রী বানানোর নির্বাচন। আলফাডাঙ্গার মানুষ বঙ্গবন্ধুর মার্কা নৌকাকে ভুলে যায়নি। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আমরা আলফাডাঙ্গাতেই থাকবো। নৌকাকে বিজয়ী করেই আমরা এ এলাকা ছাড়বো। অনুপ্রবেশকারীরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শুধু ক্ষতিই করেছে, উপকারে আসেনি।
নির্বাচনী সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক এআইজি মালিক খসরু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খান মইনুল ইসলাম মোস্তাক, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. দিলীপ রায়, বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান এমএম মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, আলফাডাঙ্গা এলাকার ৭১‘র মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার বখতিয়ার রহমান বতু, বিশিষ্ট সমাজসেবক সৈয়দ শামীম রেজা, ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। এনারা অনেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সভায় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় মাশরাফি বিন মোর্তজা বোয়ালমারী উপজেলার সহস্রাইল বাজারে এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য দেন। পথসভায় বিপুল সংখ্যক উৎসাহী যুবক-কিশোরসহ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা সহস্রাইলে পৌছালে তাকে স্বাগত জানান। এসময় নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ৪ লাখ ৭৮ হাজার ভোটারের ফরিদপুর-১ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মো. আবু জাফর (নোঙর), জাতীয় পার্টির আখতারুজ্জামান খান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নুর ইসলাম শিকদার (একতারা), ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন (ঈগল) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।