সাংবাদিকদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম। তিনি বলেছেন, আজকাল যার ইচ্ছা তিনিই সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু আদার বেপারীদের জন্য সাংবাদিকতা নয়। যারা প্রকৃত সাংবাদিক তাদের জন্যই সাংবাদিকতা। শেষ পর্যন্ত তারাই থাকবেন।
অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে নতুন আইন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো সাংবাদিক অন্যায় করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে নতুন আইনে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এক দিনের জেলের পক্ষপাতী। জেলে গেলে তার মনে হবে যে আমার কাজটা অন্যায় হয়েছিল। আর করা যাবে না। এই আইনটা কেবিনেটে আছে। আশা করছি, আগামী সংসদেই পাশ হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার রাজশাহী সার্কিট হাউসে ‘প্রেস কাউন্সিল আইন ও আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন অবহিতকরণ’ শীর্ষক সাংবাদিকদের দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, এখন যে কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে। তারা মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করছে। সাংবাদিকতার নামে সাংঘাতিকতা চলছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য অপমানজনক। এ কারণে সাংবাদিক কারা তা নির্ধারণ করা যেমন জরুরি হয়ে পড়েছে, তেমনি নতুন আইনেরও দরকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি সাংবাদিকদের সম্মান দিয়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন, সাংবাদিকরা এমন শ্রেণির লোক যাদের জন্য তিরস্কারই বড় শাস্তি। সে কারণে প্রেস কাউন্সিল আইনে কোনো অন্যায় করলে সাংবাদিকদের বেশিরভাগ শাস্তিই হয়ে থাকে তিরস্কার। মানি লোকের জন্য তিরস্কারই বড় শাস্তি। এটা তাদের আত্মসম্মানে বাধবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন আইন প্রয়োজন হচ্ছে।
সাংবাদিকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, এ কাজটা প্রেস কাউন্সিল এবং পিআইবি যৌথভাবে করছে। পিআইবি ইলেক্ট্রনিক্স এবং অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের তালিকা করছে। আর প্রেস কাউন্সিল করবে প্রিন্ট মিডিয়ার। এজন্য প্রত্যেক প্রিন্ট পত্রিকা থেকে সাংবাদিকদের তালিকা নেওয়া হবে। তবে তালিকায় নাম থাকলেই সাংবাদিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এটা যাচাই-বাছাই করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নামিদামি অনেক পত্রিকার সম্পাদকের আত্মীয়রা সাংবাদিক পরিচয় দেন। তারা তো আসলে সাংবাদিক নন, অন্য কাজ করে বেড়ান। এ রকম কেউ সাংবাদিক হিসেবে প্রেস কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না। আর সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে গ্র্যাজুয়েশন। তবে কারও যদি পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকে নিয়োগপত্রসহ তাহলে তিনি তালিকাভুক্ত হবেন। তালিকাভুক্ত হয়েই যে যা খুশি করবেন তা হবে না। প্রত্যেক ছয় মাস পরপর তার কাজকর্ম ভেরিফিকেশন করা হবে।
বক্তব্য শেষে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী রাজশাহীর ৪৪ জন সাংবাদিকের হাতে সনদ তুলে দেন প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো. শাহ আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আশরাফুল ইসলাম। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা এতে সভাপতিত্ব করেন।