Saturday , 11 May 2024
শিরোনাম

সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে ৬ লেনের দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু

আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ৬ লেনের দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু।পদ্মা সেতু চালুর পর নড়াইল-যশোরসহ আশপাশের জেলার মানুষ কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছেন।সেপ্টেম্বর মাসে যান চলাচলর খুলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কালনায় ৯৫৯.৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীতে সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সেতুটির পশ্চিমপাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা এবং পূর্বপাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা।নড়াইল-যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের জন্য মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি হবে ছয় লেনের।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের কালনাঘাট ও গোপালগঞ্জের শংকরপাশার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যানবাহন চালাচলের জন্য কালনা সেতু উন্মুক্ত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত সেতুর ৯১ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় লেনের এ সেতুর চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।সেতুর কাশিয়ানী পাশে ডিজিটাল টোল প্লাজা স্থাপিত হয়েছে। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান।২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয় বলে সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান ।
কালনা সেতু চালু হলে স্থল বন্দর বেনাপোল, যশোর, খুলনা, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঢাকাসহ আশেপাশের জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের আওতায় ভারতের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব কমিয়ে আনতে কালনা সেতু প্রধান ভূমিকা পালন করবে বলে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে আরো জানা গেছে, কালনাঘাট থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার।নড়াইল থেকে কালনা সেতু ও পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব ১২৭ কিলোমিটার। যশোর থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৫৭ কিলোমিটার এবং বেনাপোল  থেকে যশোর-নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৯২ কিলোমিটার। ফলে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশেপাশের সড়ক যোগাযোগে ঢাকার দূরত্ব কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার দেড়শ কিলোমিটার কমে যাবে। এছাড়া শিল্প শহর যশোরের নওয়াপাড়া এবং মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরা স্থলবন্দরের যোগাযোগ সহজ হবে।ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেসওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ খান জানান, পদ্মা সেতুর সঙ্গে কালনা সেতুর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। এ দু’টি সেতু (পদ্মা ও কালনা) রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। কালনা সেতু চালু হলে নড়াইল-যশোরসহ এ অঞ্চলের মানুষের ঢাকা যেতে ফেরিঘাটের অপেক্ষা আর যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না। যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি কৃষিপণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রেও সহজ হবে। পাশাপাশি কালনাঘাট এলাকায় শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতার বড় সাফল্য পদ্মা সেতু। সেই উন্নয়ন ধারাবাহিকতার সঙ্গে কালনা সেতু নির্মাণও চোখে পড়ার মতো একটি সাফল্য।কালনা সেতুটি চালুর পর নড়াইল-যশোর থেকে ঢাকা,চট্টগ্রাম সড়ক পথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদ-নদীর আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।কালনা সেতু চালুর পর দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতি সঞ্চার হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে নড়াইল-যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচল বেড়ে যাবে।
বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চালকেরা এ প্রতিনিধিকে জানান, ফেরিঘাট মানেই ভোগান্তি। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রীসহ আমাদের কষ্ট অনেকখানি কমে গেছে।কালনা সেতু চালু হলে আর কোন কষ্ট থাকবে না। এই সেতু চালু হলে উভয় পারের অন্তত ১০টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের যাতায়াত ও যান চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে জানান নড়াইল-ঢাকা খানজাহান আলী পরিবহনের চালক টুটুল ।
সওজ সূত্রে জানা যায়, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৫০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার।সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার।বাসস

Check Also

‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশিরা নাগরিকত্ব সনদ ছাড়াই এনআইডি করতে পারবেন’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি কোনো নাগরিকের দেশে এনআইডি করতে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ এখন থেকে লাগবে না। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x