বিশেষ প্রতিনিধি: ১৯৫৪ সালের ৯ই মার্চ, বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার কামালদিয়ায় মা আয়েশা’র কোল আলোকিত করে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেন আব্দুর রহমান। পিতা মোঃ শরিয়তউল্যা ও মাতা আয়েশা শরিয়তউল্যার খুব আদরের ছিলেন মোঃ আব্দুর রহমান। গ্রামের সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা প্রকৃতি, নদী ও পাখির কলতানে বেড়ে ওঠা ডানপিটে আব্দুর রহমানের স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টররের দায়িত্ব পালনকালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গেলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর আব্দুর রহমান তখন বোয়ালমারীর খরসূতী চন্দ্র কিশোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং সহপাঠীদের নিয়ে শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যার তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করেন এবং বোয়ালমারীতে কালুখালী ভাটিয়াপাড়া রেল সংযোগে টানা চারঘন্টা রেল অবরোধ করে রাখেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদী চরিত্র থেকেই রাজনীতিতে আসেন এবং পরবর্তীতে খরসূতী চন্দ্র কিশোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য যুবকদের অনুপ্রেরণা যুগিয়ে সংঘবদ্ধ করেছেন। ভারতের রানাঘাট ক্যাম্পে ট্রেনিং নেন এবং ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন প্রতিবাদী ছাত্রনেতা আব্দুর রহমান। ১৯৭৩ সালে ফরিদপুর সরকারি ইয়াছিন কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তুমুল ছাত্র জনপ্রিয়তার কারনে। কলেজে অধ্যয়ন অবস্থায়, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে গনপ্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন এবং দীর্ঘদিন কারা ভোগ করেন।
মেধাবী ছাত্র নেতা আব্দুল রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সফলতার সাথে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং যথাক্রমে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা যখন দলের দায়িত্ব নিলেন ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে, তখন মূলত আব্দুর রহমান তাকে ঘিরেই তার নেতৃত্বের প্রতি নিঃশর্ত আস্থাশীল এবং আনুগত্য প্রকাশ করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা বিভিন্ন সময়ে আব্দুর রহমান কে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্ব টুকু সঠিকভাবে পালন করেছেন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং পরবর্তীতে সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে ১৯৮৪ সালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে সারাদেশে প্রচণ্ড ছাত্র জনপ্রিয়তার কারণে, ছাত্র নেতৃত্বের গুনাবলীতে আকৃষ্ট হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এই ছাত্র আব্দুর রহমান কে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। তিনি ১৯৮৬-৮৮ ইং দেয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন। নিঃশর্ত আদর্শিক ও প্রতিবাদী চরিত্রের এই ছাত্রনেতা সফলভাবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন।
পরবর্তীতে ২০০১-০২ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৭ তম সম্মেলনে, ২০০২-০৯ ইং মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুর-০১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯তম সম্মেলনে ২০০৯-১২ ইং মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হন। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২য় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০তম সম্মেলনে ২০১৬-১৯ ইং মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব সফল ভাবে পরিচালনা করেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হন এবং একইসাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের অন্যতম এই প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক দুই দুইবারের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান।
তবে দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ যাবৎকালে করা ৬ জরিপেই ফরিদপুর-১ আসনটিতে আব্দুর রহমানের নাম আছে সবার উপরে। তার জনপ্রিয়তা অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চেয়ে অনেক বেশি।