ফ্রান্সসহ পুরো ইউরোপে এখন চলছে তীব্র শীতের প্রকোপ। উত্তর ফ্রান্সের চ্যানেল উপকূলে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় অনিশ্চিত জীবন পার করছে যুক্তরাজ্যে যেতে অপেক্ষমান অনিয়মিত অভিবাসীরা। কালে ও গ্রন্দ সান্থ অঞ্চলের এনজিও ও অভিবাসন সংস্থাগুলো অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাসরত অভিবাসীদের সহায়তা করতে ফরাসি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে উদ্বেগ বেড়েছে উত্তর ফ্রান্সের অভিবাসন সংস্থাগুলোর। এনজিওগুলোর মতে, তীব্র শীত অনানুষ্ঠানিক ক্যাম্প ও রাস্তায় থাকা লোকেদের পরিস্থিতি নাজুক করে তুলেছে।
আলোচিত অভিবাসন সংস্থা ইতুপিয়া৫৬ এর গ্রন্দ সান্থ অঞ্চলের সমন্বয়কারী আমেলি ময়ার সতর্ক করে বলেন, ‘এই মুহূর্তে তাপমাত্রা ০ থেকে -১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এটি -৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত যেতে পারে বলে ফরাসি আবহাওয়া দপ্তর ঘোষণা করেছে।’
কালে থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপকূলীয় শহরের উপকণ্ঠে একটি শিবিরে বর্তমানে প্রায় ৫০০ অনিয়মিত অভিবাসী অবস্থান করছে। তাদের সবাই ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন না করে যুক্তরাজ্যে যেতে চান। কারণ সেখানে তাদের পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন।
সাধারনত ফ্রান্সে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয় আবেদন করার পর একজন আশ্রয়প্রার্থীর দায়িত্ব সরকার নেয়।
বারবার উচ্ছেদ, বাজেয়াপ্ত ‘তাঁবু’
গ্রন্দ সান্থ অঞ্চলের শিবিরে অবস্থানরত অভিবাসীরা জানান, বর্তমানে সেখানে বসবাসের অবস্থা অনিশ্চিত। লোকেরা তাঁবুতে ঘুমায়। শিবিরে ব্যবহার করার পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। অভিবাসীদের মধ্যে শুধুমাত্র সংস্থাগুলয় খাদ্য ও স্বাস্থ্য পণ্য বিতরণ করে।
বর্তমানে তীব্র শীতে অভিবাসীদের বেঁচে থাকার জন্য তাঁবু ও কম্বল অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
মোবাইল রিফিউজি সাপোর্ট নামক একটি সংস্থা এই অঞ্চলের অভিবাসীদের মধ্যে ক্যাম্পে তাঁবু এবং কম্বল বিতরণ করে। অপরদিকে জরুরী ভিত্তিতে এবং রাতে অভিবাসন সংস্থা ইতুপিয়া৫৬ ও কম্বল বিতরণ করে থাকে। এই সংস্থাটি অত্যন্ত সুসংগঠিত হলেও প্রতি সপ্তাহে পুলিশ অস্থায়ী শিবির খালি করে দেয়ায় প্রতিবার বেশিরভাগ মালামাল জব্দ করা হয়।
যার ফলে কিছুদিন পর পর অভিবাসীদের তাঁবু এবং কম্বল যোগাড় করতে হয়।
আমেলি ময়ার হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, “বারবার ক্যাম্প উচ্ছেদ করার আমাদের মালামালের স্টক শেষ হয়ে যায়। উচ্ছেদের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কেবলমাত্র পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিস বাজেয়াপ্ত করে। কম্বল এবং ভেজা কাপড়সহ অন্যান্য জিনিস তারা অভিবাসীদের দিয়ে দেয়। যেটি অত্যন্ত অমানবিক ও দুঃখজনক।”
শীতের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতুপিয়া৫৬ একটি নৈশ টহল স্থাপন করেছে। এই টহল দল গ্রন্দ সান্থ এবং ডানকের্ক অঞ্চলে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে উপকূল থেকে নৌকায় যাত্রা করে ফিরে আসা ব্যক্তিরা অত্যন্ত মানবেতর অবস্থায় দিন পার করে। উপকূলে ফিরে আসার পর ভুক্তভোগীদের জরুরী সহায়তার প্রয়োজন হয়।
আমেলি ময়ার বলেন, “এমন অনেকে লোক আছে যারা মাঝরাতে উপকূলে ভেজা গায়ে ঘন্টার পর ঘন্টার অপেক্ষা করেন। গেল শনিবার সন্ধ্যায় বুলন স্যুর মের সৈকতে আমাদের একটি দল ২০০ জনেরও বেশি লোকের সাথে দেখা করেছে। নৌকায় যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা এসব অভিবাসীরা ভেজা গায়ে সৈকতে অপেক্ষা করছিল।”
আরেক অভিবাসন সংস্থা ওবেরজ দে মিগ্রঁর কালে অঞ্চেলের সমন্বয়কারী পিয়ের রোক বলেন, “উত্তর ফ্রান্স অঞ্চলের সবগুলো অনানুষ্ঠানিক শিবির ফরাসি প্রশাসন সাধারনত ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর পর উচ্ছেদ করা হয়। তবে এ সময় অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করা না হলেও তাদের সাথ থাকা জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়।”
এই নীতির কারণে বর্তমানে চলমান শীতে উদ্বিগ্ন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।
পিয়ের রোক আরও বলেন, ‘উচ্ছেদের পর অভিবাসীদের দ্রুত সহায়তা করতে অভিবাসন সংস্থাগুলয় সর্বোত্তম চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের যে পরিমাণ উপাদানের প্রয়োজন তার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। বিশেষ করে তাঁবুর জন্য প্রচুর অভিবাসী নিয়মিত আবেদন করেন। সরকারের উচ্ছেদের গতির সাথে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারি না।’
আগামী সপ্তাহান্ত থেকে উত্তর ফ্রান্সে বৃষ্টি শুরুর কথা রয়েছে। তবে এর আগে তামপাত্রা আরও কমতে শুরু করেছে এবং বুধবার থেকে তুষারপাত শুরু হয়েছে।