৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কিনে নিয়েছেন ইলোন মাস্ক। এ অর্থের উৎস হিসেবে তার মালিকানাধীন টেসলার শেয়ার জামানত হিসেবে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মাইক্রোব্লগিং সাইটটি ক্রয়চুক্তির একদিন পরই মার্কিন বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা সংস্থাটির শেয়ারদরে ধস নামে। মঙ্গলবার টেসলার বাজারমূল্য কমেছে ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। ফলে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহীর সম্পদেও পতন হয়েছে। একই দিনে ইলোন মাস্কের সম্পদ কমেছে ৩ হাজার কোটি ডলার।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুসারে, মঙ্গলবার টেসলার বাজারমূল্য ১২ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এতে সংস্থাটির বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে। যেখানে গত বছরের শেষ দিকে লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছিল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। টেসলার বাজারমূল্য এভাবে কমতে থাকলে ইলোন মাস্ককে ঋণের বাধ্যবাধকতা পূরণে তার কিছু শেয়ার হাতছাড়া করতে হবে। ফলে নিম্নমুখী হবে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর সম্পদও।
ইলোন মাস্ক কতটা ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কারণ টুইটারের জন্য টেসলার শেয়ার হাতছাড়া করার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের চমকে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুটি কারণে টেসলার বাজারমূল্য ও ইলোন মাস্কের সম্পদে প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণগুলো হলো, টুইটার কেনার জন্য ইলোন মাস্ক বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন এবং শঙ্কা রয়েছে যে টেসলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে তার ভূমিকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) টেসলা ৩৩০ কোটি ডলার মুনাফা পেয়েছে। এ সময়ে সংস্থাটি তিন লাখ ইউনিটেরও বেশি গাড়ি সরবরাহ করেছে। এ খবরের পর সম্প্রতি সংস্থাটির শেয়ারদরও বেড়ে গিয়েছিল। মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের একজন বিশ্লেষক ড্যানিয়েল আইভস বলেন, এখন টুইটার কেনার অর্থ পরিশোধে ইলোন মাস্ক টেসলার শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারেন। এ ভয় টেসলার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।
তিনি বলেন, ইলোন মাস্কের জন্য সহজ একটি দিক ছিল টুইটার কিনে নেয়া। অন্যদিকে কঠিন দিক হচ্ছে তার স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁস টেসলার ওপর এর প্রভাব মোকাবেলা করা।
ফোর্বস অনুসারে, গত সপ্তাহে ইলোন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার কোটি ডলার। মঙ্গলবার পর্যন্ত তার সম্পদ প্রায় ২৪ হাজার কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
ইলোন মাস্ক জনসম্মুখে টুইটার কেনার ইচ্ছা প্রকাশের পরই টেসলার শেয়ারদরে সামান্য পতন দেখা দিয়েছিল। তবে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি কিনতে সফল হবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় সে সময় বড় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে ক্রয়চুক্তির ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ দিন ছিল মঙ্গলবার। এ দিনই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদরে বড় পতন ঘটে।
টুইটার অধিগ্রহণে ইলোন মাস্ক ঋণের বিপরীতে কী পরিমাণ শেয়ার রেখেছেন তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা ভয়ে আছেন। গত বছর সংস্থাটিতে থাকা অর্ধেকেরও বেশি শেয়ারকে তিনি ঋণের জামানত হিসেবে রেখেছিলেন। ২০২১ সালে ইলোন মাস্ক কর পরিশোধে তার ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিলে টেসলার শেয়ারদরে দ্রুত পতন হয়। এজন্য আরেকবার বিক্রি টেসলার শেয়ারদর ও ইলোন মাস্কের সম্পদ আরো কমিয়ে দিতে পারে।
টেসলা বার্ষিক ফাইলিংয়ে বলেছে, ইলোন মাস্ক যদি আমাদের সাধারণ স্টকের শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হন, তবে তিনি কিছু ব্যক্তিগত ঋণের বাধ্যবাধকতা সুরক্ষিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ধরনের বিক্রি আমাদের শেয়ারদর কমিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া আমরা এ ঋণের অংশ নই। যদি শেয়ারের মূল্য কমে যায় তবে ব্যাংকগুলো দাবি করতে পারে যে ইলোন মাস্ক তার ঋণের দায়ভার মেটাতে শেয়ার বিক্রি করে দিক।