২০০৬ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি ও সরবরাহের কাজ ছিল নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এখন এই দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (১২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সচিব জানান, আইনের অধীনে একটি নিবন্ধক অফিস থাকবে। তারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজ করবে।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, গত বছরের ১০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এই আইনের আওতায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে পরিচালিত হবে। তাদের এ সংক্রান্ত একটা অফিস থাকবে। অফিসে একজন নিবন্ধক থাকবে এবং নিবন্ধকের মাধ্যমে কাজটি করা হবে।
নিবন্ধকের অফিসের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে অফিস থাকে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যখন দাঁড়াবে তখন তারা বিধি দ্বারা ঠিক করে নেবেন। যদি তারা মনে করে প্রত্যেক জায়গায় অফিস দরকার, তা তারা করবে।
আইনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেকোনো নাগরিক জন্মের পরপরই নাগরিক সনদ বা একটি নম্বর পাওয়ার অধিকারী হবেন, এটি অপরিবর্তিত হবে। এটি জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নিতে পারবেন। এটা কোনো সময় পরিবর্তন করা যাবে না।
বর্তমানে যে এনআইডি নম্বরগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীন আছে, সেগুলো চলমান থাকবে বলেও জানান সচিব।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য– সব নাগরিকের একটি ইউনিক নম্বর থাকা দরকার। এতদিন হয়ত বিভিন্ন পে নম্বরগুলো দিয়েছি। যেটা নিয়ে অনেক সময় কনফিউশন তৈরি করছে। এখন প্রত্যেক নাগরিকের একটি নম্বর থাকবে, যেটি তার আইডেন্টিটি হবে। সেটার ভিত্তিতে তার সমগ্র জীবনে, আমাদের যেমন সিআরপিসি তথ্য আছে সেগুলো আপডেট করবে। এটা আস্তে আস্তে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করব।
যাদের এখনো জন্ম নিবন্ধন বা এনআইডি হয়নি তাদের বিষয়টি কী হবে– জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা এখন থেকে নতুন নম্বর নেবেন। এখন থেকে সব জায়গায় এই নম্বরটি ব্যবহার হবে। যখন সে এই নম্বরটি পেয়ে যাবে, তখন আর কোনো নম্বর লাগবে না।
নির্বাচন কমিশনের কাজ শুধু ভোটার তালিকা তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ। বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে তখন ভোটার তালিকা ওনারা প্রণয়ন করবেন। এখানে যে এনআইডি থাকবে সেই নম্বর তারা ব্যবহার করতে পারবে।
যে সার্ভার আছে তা নির্বাচন কমিশনের অধীনে, সেটি আলাদা করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। ডাটাবেজ স্থানান্তর কীভাবে হবে– জানতে চাইলে সচিব বলেন, আইন অনুযায়ী এনআইডি সংক্রান্ত তথ্যাদি ওখান থেকে নিয়ে আমাদের যে নতুন নিবন্ধক থাকবেন, তার দপ্তরে স্থানান্তরিত হবে।
নির্বাচনের আগেই কি সংসদে আইনটি পাস করা হবে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি বলতে পারব না। প্রক্রিয়া শেষ করে সংসদে নিয়ে যাওয়া হবে। সংসদ সেটি সিদ্ধান্ত নেবে।
সংসদে আইনটি পাস হলেই কি কার্যকর হবে– জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদে পাস হলেই কার্যকর হবে না। আইনে একটি বিধান রাখা হয়েছে সরকার নির্ধারিত তারিখ থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ আইনের গেজেট প্রকাশ হলেই হবে না, সরকার যে দিন থেকে কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করবে সে দিন থেকে কার্যকর হবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোগান্তি দূর করার জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনআইডির ভুল থাকলে কীভাবে সংশোধন হবে, সেগুলো সহজ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে জনবল লাগবে তারা তা নেবেন। সেভাবে অর্গানোগ্রাম তৈরি করবেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে জনবল স্থানান্তর করা হবে কি না, কারণ নতুন লোকবল তো বিষয়টি বুঝবেন না– এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আপনি কেন ধারণা করছেন তারা দক্ষ হবে না? অভিজ্ঞ লোকজনই তো নিয়োগ করা হবে। ইতোমধ্যে আমাদের লোক তৈরি হয়েছে। অভিজ্ঞ লোক তো অবশ্যই লাগবে, তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হবে।